বগুড়া প্রতিনিধি:
জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় স্ত্রীর বর্তমান স্বামীকে খুনের ঘটনায় শাহীনুর রহমান শাহীন নামে একজনকে গ্রেফতার করেছে বগুড়ার পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। শাহীন নিহতের স্ত্রীর প্রাক্তন স্বামী। আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন শাহীন। নিহতের নাম মহসীন আলী। তিনি তার গ্রামের বেলগাড়ী মণ্ডলপাড়া জামে মসজিদের ঈমাম ছিলেন। তার স্ত্রীর নাম শারমীন সুলতানা শাকিলা। গ্রেফতার হওয়া ৩৩ বছরের শাহীন নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার চাকরাইল গ্রামের বাসিন্দা। তার বাবার নাম নঈম উদ্দিন। ২৬ বছর বয়সী শাকিলাও বদলগাছীর চাকরাইল গ্রামের বাসিন্দা। ৮ জুন কালাইয়ের বামন গ্রামের একটি ধানক্ষেত থেকে পানিতে ভাসমান অবস্থায় থাকা মহসীনের লাশ উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এর আগে, ৭ জুন লোহার পাত দিয়ে আঘাত করে মহসীনকে হত্যা করা হয়। পরবর্তীতে ৮ জুনই কালাই থানায় অজ্ঞাতনামা আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়। মামলাটি করেন নিহতের বাবা। পরবর্তীতে ২১ জুন গাজীপুর মেট্রোপলিটনের গাছা থানাধীন ছয়দানা হাজীপুকুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে শাহীনকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার শাহীন হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন বলে জানান মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বগুড়ার পিবিআইয়ের এসআই মো. সবুজ আলী। ২২ জুন শাহীনকে আদালতে সোপর্দ করা হলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন তিনি।
গতকাল বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে নিজ কার্যালয়ে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন বগুড়ার পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকরামুল হোসেন। এসপি জানান, মহসীনের স্ত্রী শাকিলা গ্রেফতার শাহীনের প্রাক্তন স্ত্রী। তাদের ১২ বছরের সংসার ছিল। দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ওয়াসিফা নামে এক মেয়ে সন্তান নিয়ে সুখেই কাটছিল তাদের দাম্পত্য জীবন। তবে পারিবারিক কলহের কারণে বছর খানেক আগে শাহীনকে ডিভোর্স দেন শাকিলা। এরপরই থেকে তাদের মেয়ে ওয়াসিফা শাহীনের কাছেই থাকত। পরবর্তীতে মাস তিনেক আগে মহসীনের সঙ্গে নতুন ঘর বাঁধেন শাকিলা। বিষয়টি জানার পরই ক্ষিপ্ত হন শাহীন। এরমধ্যে সম্প্রতি শাহীন-শাকিলার মেয়ে ওয়াসিফার উপবৃত্তির জন্য বাবা-মায়ের এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধনের প্রয়োজন হয়। শাহীন তার প্রাক্তন স্ত্রী শাকিলার কাছে এনআইডি ও জন্ম নিবন্ধন কপি প্রয়োজনের কথা জানান। কিন্তু শাকিলাসহ তার পরিবারে শাহীনকে এসব দিতে রাজি হয়নি। এতে শাহীন অনেকে রেগে গেলেও নীরব থাকেন। তিনি আরও জানান, এক পর্যায়ে কৌশলে শাকিলার বর্তমার স্বামী মহসীনের মুঠোফোন নম্বর সংগ্রহ করেন শাহীন। নিজের পরিচয় গোপন রেখে মহসীনের সঙ্গে গড়ে তোলেন সখ্যতা। পরিকল্পনা মোতাবেক ৭ জুন মহসীনকে কালাই উপজেলার মোলামগাড়ী বাজারে দেখা করতে বলেন শাহীন। মহসীনও সেখানে আসেন। তারা একসঙ্গে ওই বাজার এলাকায় চা পান করেন। পরে মহসীনকে নিয়ে মোটরসাইকেলযোগে মোলামগাড়ীবাজার ও করিমগাড়ী এলাকার মাঝামাঝি স্থান বামন গ্রামে যান শাহীন। সেখানে যাওয়ার পরপরই নিজের পরিচয় মহসীনের কাছে প্রকাশ করেন শাহীন। একই সঙ্গে মেয়ের উপবৃত্তির জন্য শাকিলার এনআইডি ও জন্ম নিববন্ধনের সনদ চান। ওই সময় এসব কাগজ শাহীনকে দিতে রাজি হননি মহসীন। এক পর্যায়ে শাহীন লোহার পাত (একপাশ কিছুটা ধারালো) দিয়ে মহসীনের মাথায় পিছনে দুই-তিনবার আঘাত করেন। এসময় মহসীন মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
এসপি আকরামুল জানান, মহসীন মাটিতে লুটিয়ে পড়ার পর শাহীন লোহার পাত দিয়ে মহসীনের মাথার পিছনে আরও দুই-তিনবার আঘাত করেন। এতে ঘটনাস্থলেই মহসীনের মৃত্যু হয়। পরে লাশ ধানক্ষেতে ফেলে ঘটনাস্থল দ্রুত ত্যাগ করেন শাহীন এবং তার ব্যবহৃত মুঠোফোন, সিম ও ধারালো অস্ত্র পাথে ফেলে দেন। শাহীন নতুন মুঠোফোন ও সিম কেনেন শুধুমাত্র মহসীনের সঙ্গে যোগাযোগ ও তার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের করার জন্য। প্রাক্তন স্ত্রীকে বিয়ে করায় ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না পাওয়ায় মহসীনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেন শাহীন।