নাজিম উর রহমান
গত ৩০ মার্চ ৪০ তম বিসিএসের ফল প্রকাশিত হয়। ৪০তম বিসিএসে ১ হাজার ৯৬৩ জনকে বিভিন্ন ক্যাডারে নিয়োগের জন্য সুপারিশ করেছে পিএসসি। যারা ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন বিভাগের ক্যাডার হয়েছেন তাদের অভিজ্ঞতার আলোকে তা নিয়ে একটি সিরিজ প্রতিবেদন তৈরি করছে দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠ। আজ হচ্ছে তার পঞ্চম পর্ব।
আজকে আমাদের সাথে আছেন সাইফুল ইসলাম সাইফ যিনি ৪০তম বিসিএসে প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত। এই প্রতিনিধির সাথে এক পড়ন্ত বিকালে ধানমণ্ডি লেকের পাড়ে বসে নিজের অতীত, অধ্যবসায়, সাধনার গল্প তারপর বিসিএস ক্যাডার হওয়ার যে জার্নি আর তার আগামীর কর্ম পরিকল্পনা নিয়ে বলছিলেন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিনিউকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাবেক শিক্ষার্থী সাইফুল ইসলাম সাইফ। সম্প্রতি ৪০তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রশাসন বিভাগের ক্যাডার হয়েছেন তিনি।
সাইফুল ইসলাম সাইফের জন্মস্থান মাদারীপুর সদরে ও বেড়ে উঠা ঢাকার মিরপুরে। তার পরিবারে আছেন মা বাবা ও একজন বড় বোন। সাইফুল ইসলাম সাইফের বাবা ছিলেন প্রবাসী,বর্তমানে তিনি একটি মাদ্রাসার শিক্ষক ও ইমাম। আর মা ছিলেন গৃহিণী। কিন্তু তারা তাদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে সবসময় উৎসাহ দিয়েছেন। কোলে থাকাকালীন সময়ে বাবা প্রবাসে পাড়ি জমান, আর মার শাসনেই তার বেড়ে উঠা। শিক্ষা বিষয়ক কোন বিষয়ে তারা তাকে না করেন নি। মায়ের প্রভাব ছিল তার জীবনে অপরিসীম, যেহেতু বাবা প্রবাসে ছিলেন, মার কাছেই ছিল তার সব আবদার। তিনি বলেন,“ আমার মা উচ্চ শিক্ষিত ছিলেন না কিন্তু আমার যা সাহায্য প্রয়োজন ছিল তারা সব করতেন । আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি এ পরিবারে জন্মগ্রহন করে।”
সাইফুল ইসলাম সাইফ তিনি মাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন মণিপুর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে আর উচ্চমাধ্যমিক সম্পন্ন করেছেন ঢাকা সিটি কলেজ থেকে। তারপর ভর্তি হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক্স অ্যান্ড কমিনিউকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে।
সাইফুল ইসলাম সাইফ একজন পুরাদুস্তর পর্যটক। নিজের আছে নিজস্ব ভ্রমণ গ্রুপ যার নাম পথিক ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস,আর কয়েকটা জেলা ভ্রমণ করলেই পুরো বাংলাদেশের প্রতিটি জেলার মাটিতে তার পা পড়বে । ভ্রমণের এ অভ্যাসের কথা উঠতেই তার বাবার নাম চলে আসে কারন এটা তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া। তার বাবা কে হটাৎ করে ফোন করলে বলতেন তিনি আজ মৌলভিবাজার তো কাল বগুড়া।তার এ ভ্রমণ অভ্যাস তার বাবার কাছ থেকে পাওয়া।
জীবনের মূলমন্ত্র নিয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তর দেন, ‘অষ্টম শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষায় এক ভাই ফার্স্ট হয় তখন থেকে আমি প্রতিজ্ঞাবব্ধ আমিও বুয়েটে ভর্তি হব কিন্তু চার বিষয়ে ২০ মার্কস থাকা লাগত কিন্তু আমার তা ছিল ১৯ তাই আমি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারি নি। তারপরও আমি আশাহত হই নি। কুয়েটে ভর্তি হই এবং আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি ইঞ্জিনিয়ার হতে পেরেছি। আমার ইচ্ছে ছিল আমি জার্মানিতে উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে যাওয়ার জন্য। কিন্তু আমি একমাত্র ছেলে হওয়াতে আমার বাবা মা আমাকে সম্মতি দেননি। যার কারনে আমার এ স্বপ্ন ভঙ্গ হল। আর বেসরকারি চাকরি আমাকে এতটা টানত না। তখন বাসার সবার কাছে বলে বিসিএস যেহেতু একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়া সেহেতু আমার কিন্তু অনেকটা সময় লাগবে কিন্ত তাতে তাদের কোন আপত্তি ছিল না। আমি সবার দোয়া নিয়ে ঢাকা চলে আসি। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাস থেকে পুরোদমে আমি বিসিএস পড়া শুরু করি।’
জীবনে মোড় ঘুরানোর মত কোন কাহিনির বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘কলেজ লাইফে একবার পরীক্ষায় খারাপ করলে , আমি বুঝতে পারি আমার এমন হবার কথা ছিল না, আমাকে নিজেকে পরিবর্তন করতে হবে। আমি সেটা করেছি এবং ফলাফল ও পেয়েছি।। ভার্সিটি লাইফে আমি নিজের অবহেলার কারনে ব্যাকলগের কবলে পড়ে যাই। তা সত্ত্বেও নিজের প্রচেষ্টায় এবং সৃষ্টিকর্তার করুণায় আমি যথাসময়ে বের হতে পেরেছি ।’
বিসিএস প্রস্তুতি নিয়ে তিনি বলেন, ‘বিসিএসের প্রচলিত প্রস্তুতি বলতে যেটা বোঝায়, ১০-১২ ঘন্টা টেবিলের সাথে লেগে থাকা সেটা আমি নিই নি । আমি আমার মত করে এগিয়েছি। যতটুকু মনে হয়েছে পড়েছি। যখন পড়তে ভালো লাগেনি ঘুরে বেড়িয়েছি। সবার দুটো জোন থাকবে স্ট্রং জোন আর উইক জোন। আমার টার্গেট ছিল স্ট্রং জোনকে স্ট্রংগার করতে হবে। আর উইক জোনকে অ্যাভারেজে আনতে হবে । এই স্ট্রাটেজি প্রিলি, রিটেন দুইটার জন্যই কার্যকরী। ভাইভাতে আপনাকে পন্ডিত হয়ে যাওয়া লাগবে বিষয়টা এমন না। নার্ভাসনেস সবার কাজ করে। কারো কম কারো বেশি । এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। আমার যেটা মনে হয় প্রশ্নের উত্তর পারার থেকে অ্যাপ্রোচ টা বেশি ইম্পরট্যান্ট। কনফিডেন্সের সাথে যে কোনো প্রশ্ন অ্যাপ্রোচ করা গেলে পজিটিভ ইম্প্রেশন তৈরি হবে। বাকিটা কপাল আর সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা। বিসিএস যাদের একমাত্র গোল তাদের উদ্দ্যেশে বলেন, ‘সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রস্তুতি নিতে হবে এবং নিয়মিত পড়ার টেবিলে সময় দিতে হবে। সেটা যতক্ষণ ই হোক। আর অবশ্যই অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসে ভোগা যাবে না।
এবার আমার জানতে চাই কর্মক্ষেত্র নিয়ে আপনার পরিকল্পনা কি? তখন বলেন, ‘আমি নিজেকে একজন দক্ষ প্রশাসক হিসাবে গড়ে তুলতে চাই আর আমি যেহেতু ভ্রমণ পিপাসু মানুষ সেহেতু বাংলাদেশের পর্যটনকে এগিয়ে নিতে কাজ করতে চাই।’