তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
বছর বছর ঘুরে আসে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের ভয়াল স্মৃতির ১৪ জুন। সেদিন মধ্যরাতে বিস্ফোরণে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে জাতীয় উদ্যান লাউয়াছড়া ও এর পাশের মাগুরছড়া এলাকা। মুহূর্তে আকাশচুম্বি কালো ধোয়া আর আগুনের লেলিহান শিখা দেখে দিকবিদিক ছুটাছুটি শুরু করেন এলাকার মানুষজন। অপূরণীয় ক্ষতি হয় বনের পশুপাখি ও নানান জাতের উদ্ভিদসহ জীব বৈচিত্র্যের। তবে ২৫ বছরেও জনসম্মুখে সেদিনের ক্ষয়ক্ষতির তালিকা প্রকাশ হয়নি, আদায় হয়নি ক্ষতিপূরণ। ১৯৯৭ সালের ১৪ জুন মধ্যরাত ১টা ৪৫ মিনিটে মাগুরছড়া গ্যাসকূপে বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে গোটা কমলগঞ্জ। সেদিন প্রায় ৫০০ ফুট উচ্চতায় ওঠা আগুনের লেলিহান শিখা লন্ডভন্ড করে দিয়েছিল বিস্তীর্ণ বনভূমি এলাকা।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ সেই অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয় গভীর বন ও এর সাহচার্যে থাকা বিপুল সংখ্যক জীববৈচিত্র্য। ক্ষতির মুখোমুখি হয় রেল ও সড়কপথ, বিদ্যুৎ লাইনসহ এই অঞ্চলের অসংখ্য স্থাপনা। কিন্তু দুর্ঘটনার জন্য দায়ী মার্কিন গ্যাস উত্তোলনকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিডেন্টাল ক্ষয়ক্ষতির আংশিক পরিশোধ করলেও কোনো ক্ষতিপূরণ পায়নি বন বিভাগ। পূর্ণ ক্ষতিপূরণ না দিয়েই ইউনিকলের কাছে হস্তান্তরের পর সর্বশেষ শেভরনের কাছে বিক্রি হয়েছে এই গ্যাসক্ষেত্র।
তৎকালীন সরকারও ক্ষতিপূরণ আদায়ে জোরালো ভূমিকা পালন করেনি। ফলে মাগুরছড়া দুর্ঘটনার ২৫ বছর পূর্ণ হলেও আজ ও ক্ষতিপূরণ না পেয়ে নীরবে চোখের জল ফেলছে ক্ষতিগ্রস্তরা। এ নিয়ে মৌলভীবাজার তথা সিলেটের জনমনেও ক্ষোভ রয়েছে।
মাগুরছড়া খাসিয়া পুঞ্জির মন্ত্রী জিডিসন প্রধান সুচিয়াং বলেন, এ ঘটনায় প্রাকৃতিক বনের যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা কেউ বুঝতে পারবে না। আমরা যারা এই বনে বসবাস করছি তারা বুঝতে পারছি।
বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, বনের ১৭৭ কোটি টাকার ক্ষতি নিরূপন করে দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। প্রাকৃতিক বনের ক্ষতি কখনোই পুষিয়ে ওঠার নয়।
বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের সিলেট বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, বনের ক্ষতি নিরূপণ করে দেওয়া হলেও এ পর্যন্ত কিছুই পাওয়া যায়নি। মাগুরছড়া গ্যাসকূপ বিস্ফোরণে ক্ষতিপূরণ প্রদানে কোনো অগ্রগতি নেই। পূর্বে যে অবস্থায় ছিল এখনও সে অবস্থা।
মৌলভীবাজার জেলার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান এ বিষয়ে বলেন, আমার কাছে ক্ষতিপূরণের কোনো আবেদন অপেক্ষমান নেই। বর্তমানে ক্ষতিপূরণের জন্য কেউ আমার কাছে আসেনি। পরিবেশ বিপর্যয়ের ব্যাপারে আগের শিক্ষা নিয়ে আমাদের সকলকে সচেতন থাকতে হবে।