নাজিম উর রহমান।।
চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে মারা গেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক শিক্ষার্থী। সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র। তার নাম মাহাবুব আদর। সে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।
চলন্ত ট্রেন থেকে ছিটকে পড়ে মারা যাওয়ার বিষয়টি বৃহস্পতিবার (১৭ মার্চ) দুপুরে দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠকে নিশ্চিত করেছেন ওই শিক্ষার্থীর চাচা ফরহাদ। এর আগে সকালে পাবনার জেলার পাকশি সেতুতে এই ঘটনা ঘটে বলে জানায় ফরহাদ।
মাহাবুব আদরের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলাল উপজেলার সদর ইউনিয়নে।সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের ১০০৬ নাম্বার কক্ষে অবস্থান করতেন। চার সদস্যের পরিবারে সে তার পিতা মাতার একমাত্র ছেলে সন্তান। তার পিতার নাম মো. হান্নান মিঠু। তিনি একজন স্থানীয় রাজনীতিবিদ বলে জানা যায়। পড়েছেন জয়পুরহাট আর বি সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে এবং ঢাকার মাইলস্টোন কলেজে। ২০১৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডি ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টে পড়ার সুযোগ হয় তার।
তার চাচা ফরহাদ বলেন, মাহাবুব কুষ্টিয়া ঘুরতে গিয়েছিল। গতকাল বুধবার রাতে সে ফেসবুকে ছবি আপলোড দিয়েছে দেখলাম। আজকে সকালে শুনেছি সে মারা গেছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া যাওয়ার সময় পাবনার পাকশি সেতুর ওখানে জানালা দিয়ে মাথা বের করছিল। তখন সেতুর রেলিং (লোহা) এর সাথে ধাক্কা লেগে পরে গিয়ে সাথে সাথে সেখানেই মারা গেছে। তার পরিবারের সদস্যরা সেখানে গেছে। সন্ধ্যার দিকে তাকে নিয়ে আসবে।
দুপুর ১২ টার দিকে নিহতের ফেসবুক প্রোফাইলে গিয়ে দেখা যায়, তিনি ১০ ঘণ্টা আগে ফেসবুক ডে-তে ‘স্টোরি’ আপলোড করেছিলেন। সেখানে ট্রেনের ছাদে সদ্য পরিচয় হওয়া একজনের সাথে সেলফি তুলতে দেখা গেছে তাঁকে। ক্যাপশনে লেখা ‘অফ টু কুষ্টিয়া’ (কুষ্টিয়ার উদ্দেশে যাত্রা), কঠিন তবুও আনন্দঘন, মাঝপথে জুটেছিল অপরিচিত সঙ্গী’।
মাহাবুরের এরকম হঠাৎ চলে যাওয়ায় ভেঙে পড়েছেন তার সহপাঠীরা। তাদের মতে আদরের মৃত্যুর পিছনে কোন রহস্য আছে কারন আদর রাতে ফেসবুকে যে ডে আপলোড করেছিল তাতে তার পাশে একজন অপরিচিত মানুষ ছিল। তার সহপাঠি রা দাবি করছে ওই লোকের খোঁজ পাওয়া গেলে আসল রহস্য উন্মোচন হবে।
তার হলের ও ডিপার্টমেন্টের সহপাঠী আল আমানত বলেন, মাহাবুব একজন অমায়িক ছেলে ছিল। সে খুবই মিশুক, হাসিখুশি ও প্রাণবন্ত থাকত। তার এভাবে হঠাৎ চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না তার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত চান।
পোড়াদহ রেলওয়ে থানার উপপরিদর্শক নজরুল ইসলাম জানান, আমরা আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে খবর পাই, হার্ডিঞ্জ ব্রিজের ওপর একটি লাশ পাওয়া গেছে। ট্রেনে করে সেখানে ১১টা ১০ মিনিটের দিকে গিয়ে লাশ থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইডি কার্ড দেখে তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার মাথা, মুখ ও হাঁটুতে ক্ষতচিহ্ন আছে।
নিহতের পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে কথা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মাসুদুর রহমান দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠকে বলেন, আমি এই বিষয়ে জেনেছি। ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে জানানো হয়েছে। আমি ওর বন্ধুদের সাথে এই বিষয়ে যোগাযোগ করছি।