অনলাইন ডেস্ক ।।
গেস্টরুমে শিক্ষার্থী নির্যাতনের প্রমাণ পাওয়ার পর ছাত্রলীগের কয়েকজন অনুসারীকে বহিষ্কার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হল প্রশাসন ও সূর্যসেন হল প্রশাসন । কয়েক মাস না পেরোতেই এবার গেস্টরুম নির্যাতনের অভিযোগ উঠল স্যার এ এফ রহমান হলের ছাত্রলীগ অনুসারীর বিরুদ্ধে।
গত মঙ্গলবার(১৫ই ফেব্রুয়ারী) নির্যাতনের এই ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মোল্লা তৈমুর রহমান। তিনি শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগে অধ্যায়নরত। তাঁর অভিযোগ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ও হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী রোকনুজ্জামান রোকন তাঁকে গেস্টরুমে ডেকে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। এ নির্যাতনের ফলে কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাননি বলে দাবি তার। বিষয়টি হল প্রশাসনকে জানালে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করেছেন তৈমুর। ঘটনায় হুমকির মুখে হল ছেড়েছেন তিনি।
অভিযুক্ত রোকন স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনায়েম শাহরিয়ার ওরফে মুনের অনুসারী বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। মুনায়েম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেনের অনুসারী।
বৃহস্পতিবার রাত আট ঘটিকায় এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কেএম সাইফুল ইসলাম খানের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তৈমুর। তৈমুর দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠকে বলেন,” আমি বাঁধনে কাজ করি।বাঁধনের এক বড় ভাই আমাকে রক্তের গ্রুপ জানতে হলের মাঠে ডাকে।পরে রোকন ভাই রাতে গেস্টরুমে এসে আমি হলের মাঠে কেন গিয়েছি ও বাঁধনের সিনিয়র ভাইয়ের সাথে কথা বলেছি তা জানতে চায়।আমি কারণ বললে তিনি আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করে এবং এক পর্যায়ে আমাকে কলার ধরে গায়ের সর্বশক্তি দিয়ে আমাকে থাপ্পড় মারেন।ফলশ্রুতিতে আমি কয়েক ঘণ্টা কানে শুনতে পাই নি ও অচেতন হয়ে পড়ি।পরবর্তীতে সিনিয়র ভাইরা এসে আমাকে এগুলোর সাথে অভ্যস্ত হয়ে যেতে বলে। আমি ভয় পেয়ে এবং নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হল ছেড়ে ভাইয়ের বাসায় আশ্রয় নিই।আমি তীব্র নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি”।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এফ রহমান হলের প্রথম বর্ষের আরেক শিক্ষার্থী দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠকে বলেন, রোকন ভাই খুবই উগ্র এর আগেও তিনি অনেক ছাত্রকে গেস্টরুমে মেরেছেন। নিজেকে মোস্ট পলিটিক্যাল প্রমাণের জন্য তিনি জুনিয়রদের প্রচুর গালিগালাজ ও মারধর করেন। এমনকি কিছুদিন আগে আমার এক বন্ধুকে তিনি মেরে কান ফাটিয়ে রক্তাক্ত করেছিলেন। গায়ে যাতে দাগ না পড়ে তাই বালিশ দিয়েও মারত।
তবে নির্যাতনের অভিযোগের বিষয়টি দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠের কাছে অনেকটা ভয়ে অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত রোকনুজ্জামান রোকন । তিনি বলেন, নির্যাতনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এ এটনায় হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মুনেম শাহরিয়ার মুন বলেন, সংগঠন থেকে কখনোই কাউকে এরকমের নির্দেশ দেয়া হয় না। যদি এরকম জঘন্য কাজ কেউ করে থাকে তাহলে প্রভোস্ট স্যার যে সিদ্ধান্ত নিবেন তাতে আমরা একমত পোষণ করবো। আর অভিযোগ প্রমানিত হলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।
বিষয়টি সম্পর্কে আরও জানতে বাংলাদেশ কণ্ঠের পক্ষ থেকে প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খানের সাথে দেখা করা হলে তিনি ভুক্তভোগীকে দু দিন সময় অপেক্ষা করতে বলেন। এ বিষয়ে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে দৈনিক বাংলাদেশ কণ্ঠকে জানান ওই হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. কে এম সাইফুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, আজকে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ হাতে পেয়েছি। তদন্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তদন্ত কমিটিতে ওই হলের দুই জন হাউজ টিউটরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- ড. ফারুক শাহ ও ড. মুমিত আল রশীদ।