অনলাইন ডেস্কঃ
অবশেষে আজ বুধবার সকাল ১০টায় অধ্যাপক ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক আনুষ্ঠানিক ভাবে পানি পান করিয়ে অনশন ভাঙ্গালেন শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীদের । গত সাতদিন ধরে শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মোঃ ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগের দাবি করে উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে । তার পর থেকে দফায় দফায় শিক্ষকেরা তাদের অনশন ভাঙ্গার চেষ্টা করলেও ব্যার্থ হন । আজ অধ্যাপক ডঃ জাফর ইকবালের অনুরোধে তারা পানি পান করে অনশন ভাঙ্গলেও উপাচাের্যর পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলে ঘোষণা দেন।
তার আগে গতকাল রাত থেকেই শিক্ষার্থীরা ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হকের বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা জানতে পারেন । তারপর থেকেই শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বাড়তে থাকে । আজ বুধবার ভোররাতে ডঃ জাফর ইকবাল তার সহধর্মিনীকে সাথে নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদের মাঝে আসেন এবং তাদের সাথে দুই ঘন্টা আলোচনা করে তাদের কথা শোনেন ।
এ সময় ড. জাফর ইকবাল ও তার স্ত্রী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মা ঘোষণা করে বলেন, তোমরা টের পাচ্ছো না তোমরা কি করেছ । বাংলাদেশের ৩৪ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর বলেছেন যদি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি পদত্যাগ করেন তবে তারাও পদত্যাগ করবেন । এটা আমার দেখার খুবই শখ । তবে আমার মনে হয় না আমার এ আশা সহজে মিটবে ।
ড. জাফর ইকবাল শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ও দাবি শোনার পর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তোমাদের জীবন অনেক মূল্যবান, তোমরা কেন একটা মানুষের জন্য জীবন দিবে । এটা মানা যায় না । তোমরা আমাকে গণমাধ্যমের সামনে কথা দিয়েছে অনশন ভাঙ্গবে । আমি খুব আবেগী মানুষ। আমি এসব দেখলে চোখের পানি আটকে রাখতে পারি না । আমি বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী স্মারকে লিখে ১০ হাজার টাকা পেয়েছি এটা এখন তোমাদের দিলাম । দেখি সিআইডি আমাকে অ্যারেস্ট করে কিনা । আমাকে ধরে নিয়ে যাক ।
গ্রেফতার হওয়া পাঁচ সাবেক শিক্ষার্থীর বিষয়ে তিনি বলেন, পাঁচ শিক্ষার্থীর বিষয়ে কথা হয়েছে । যেহেতু মামলা করা হয়েছে তাদের আদালতে তোলা হবে । তবে যতটুকু আশ্বাস পেয়েছি তাদের জামিন দেয়া হবে ।
পুলিশদের উদ্দেশ্য করে ড. জাফর ইকবাল ও তার সহধর্মিনী অধ্যাপক ইয়াসমিন হক বলেন, ছাত্রদের উপর হাত তুলবেন না । তাদের উপর হাত তুলে অনেক বড় ক্ষতি করে ফেলেছেন । তাদের আর হয়রানি করবেন না ।
তার আগে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাস ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমরা যারা অনশন করছি অনেক চেষ্টা করেও কেউ আমাদের অনশন ভাঙ্গাতে পারেনি । আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা অনশন চালিয়ে যাব ।
উল্লেখ্য, গত ১৩ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট জাফরিন আহমেদ লিজার পদত্যাগ দাবি করে তারা তিনদফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ করেন । পরবর্তীতে এর কোন সমাধান না হলে তারা ১৬ জানুয়ারী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিটি ভবনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে অবুরুদ্ধ করে রাখেন । পরে পুলিশ এসে ছাত্রদের উপর লাঠিচার্জ করে, টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেয় । এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ১৯ জানুয়ারি এক দফাদাবি নিয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করে বাসভবনের সামনে আমরণ অনশন শুরু করে ।