অনলাইন ডেস্ক : হুমায়ূন আহমেদ। বাংলা সাহিত্যের এক বিস্ময়কর যাদুকর। যখন যেখানে হাত দিয়েছেন সেখানেই সোনা ফলিয়েছেন। মধ্যবিত্ত বাঙ্গালীকে উপজীব্য করে সাহিত্য রচনা ও সেই একই শ্রেণীকে সাহিত্যমুখী করার মধ্য দিয়ে তিনি একটি নতুন ধারার বা চিন্তার জন্ম দিয়েছেন। বাংলা চলচ্চিত্রেও একটি পরিচ্ছন্ন ধারার জন্ম দেওয়া ও সাধারণ শিক্ষিত সমাজকে নাটকমুখো করার ক্ষেত্রেও তার অবদান অনন্য। হুমায়ূন আহমেদের এর তুলনা হুমায়ূন আহমেদ নিজেই।
একজন সাহিত্যিকের যে অনিবার্য অভিযাত্রা তার চরাভূমির পরতে পরতেও থাকে প্রেম। তিনি অহর্নিশ ভালোবাসা কিংবা আবেগ-বেদনার অন্তর্দহনে দগ্ধ হতে থাকেন। তার নিরুদ্দিষ্ট জীবনের বাহন অবশ্যই প্রেম। সৃষ্টির রহস্য যেমন নিহিত থাকে প্রেমে; তেমনি লেখক প্রেমের গভীর নিগূঢ়তম পথে পদচিহ্ন রেখে সৃষ্টির খাতায় ক্রমাগত সোহাগ-চুম্বন এঁকে চলেন। লেখকের সে এক অন্যরকম জীবন।
এমন পরিশীলিত মনোভাব নিয়ে লেখক হুমায়ূন আহমেদ ১৯৭৩ সালে প্রণয়াবদ্ধ হন গুলতেকিনের সাথে। ষোড়শী রূপবতী গুলতেকিনের প্রেমে হুমায়ূন তখন পাগলপারা ছিলেন। হুমায়ূন যখন পিএইচডি করতে বিদেশ পাড়ি দিচ্ছিলেন তখন গুলতেকিন গর্ভবতী। কিশোরী স্ত্রীর প্রেমে মগ্ন হয়ে তিনি বিমানের টিকিট ছিঁড়ে ফেলতে চাইলেন। কিন্তু বুদ্ধিমতি গুলতেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও উঠতি লেখক স্বামীর পাগলামিকে আমলে নেননি। বরং যোগ্য জীবনসঙ্গী হিসেবে স্বামীকে ভালোবেসে সাফল্যের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছেন। তাদের এই গভীর ভালোবাসা একসময় সময়ের কোপানলে পড়ে।
একদা লেখক হুমায়ূন যে গুলতেকিনের প্রতি আত্মসমর্পণ করেছিলেন সেখান থেকে তার খুবই সন্তর্পণে মোহমুক্তি ঘটতে লাগলো। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৩ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটলো। এরপর তিনি মেহের আফরোজ শাওনের সাথে দ্বিতীয়বার বিবাহ-বন্ধনে আবদ্ধ হলেন। হুমায়ূনের জীবনে পুনরায় গভীর প্রেম এলো এবং তিনি শুধুমাত্র ভালোবাসায় অন্ধ হয়েই শাওনের সাথে নিজেকে জড়ালেন। হুমায়ূনের জীবনে দুই নারী এলেন। রুচিশীল ও পরিমিতিবোধসম্পন্ন হুমায়ূন নিষিদ্ধ পথে পা বাড়াননি। ধর্ম ও সামাজিকতার মধ্যে থেকেই তিনি তার যাপিত জীবনের নকশা এঁকেছিলেন।
আজ ১২ ডিসেম্বর হুমায়ূন আহমেদ আর শাওনের বিবাহবার্ষিকী। ২০০৪ সালের ১২ ডিসেম্বর হুপমায়ূন আহমেদ ও শাওন বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের ১৩তম বার্ষিকীতে বিয়ের দিনের কিছু গল্প তিনি তুলে ধরেছেন। এসব গল্প অনেকেরই অজানা। শাওন লিখেছেন, ‘খুব সাদামাটাভাবেই হওয়ার কথা ছিল আমার বিয়েটা। ভেবেছিলাম কোনো রকম একটা শাড়ি পরে তিনবার কবুল বলা আর একটা নীল রঙের কাগজে কয়েকটা সাইন।’অসম্ভব জনপ্রিয় একজন লেখক এই হুমায়ূন আহমেদ। জীবিত হুমায়ূনের চেয়ে মৃত হুমায়ূন যেন অনেক বেশি শক্তিশালী। হুমায়ূনের পরিবারের সদস্যরা যার যার যোগ্যতায় যতই বলীয়ান হোন না কেনো তাদের জীবনের চক্রবাক এখনো ঘুরপাক খায় হুমায়ূনকে ঘিরেই।
ব্যাক্তি মেহের আফরোজ শাওনের অনেক গুণ। ভালো গান গাইতে পারেন, ভালো অভিনয় করেন। তারপরও বয়সের একটা ফারাক থেকেই যায়, কিন্তু হুমায়ূন আহমেদ শাওনের মধ্যে কী এমন পেয়েছিলেন যে নিজের অন্তরে জায়গা করে দিয়েছিলেন? কী তাদের প্রেমের উপাখ্যান? এমন প্রশ্নের জবাবে অভিনেত্রী শাওন বলেন, ‘আমার তো মনে হয় দু’টো বিষয়ই পরিপূরক। তবে হ্যাঁ, তিনি প্রথমত আমার প্রতিভার প্রেমে পড়েছিলেন, এরপর তিনি আমার প্রেমে পড়েছিলেন।’আপাত দৃষ্টিতে এই অসম সম্পর্ক নিযে আলোচনার কমতি নেই।
এখনো হুমায়ূন এদেশের অসংখ্য মানুষকে তার লেখনীতে সম্মোহন করে রেখেছেন।হুমায়ূনপ্রেমীরা হলুদ পাঞ্জাবী পরে ‘হিমু’ সাজে কিংবা নীল শাড়ি পরে ‘রূপা’ বনে যায়। ‘মিসির আলী’ এবং ‘বাকের ভাই’ চরিত্র এদেশের মানুষের হৃদয়ে আজো অম্লান।