রাস্তা সম্প্রসারনের জন্য কাটা হচ্ছে সহস্রাধিক গাছ

রাস্তা সম্প্রসারনের জন্য কাটা হচ্ছে সহস্রাধিক গাছ

জেলা

জুয়েল রানা, টাঙ্গাইল প্রতিনিধিঃ
টাঙ্গাইল-আরিচা আঞ্চলিক মহাসড়ক সম্প্রসারণ করতে সড়কের দুই পাশের গাছ কাটা হচ্ছে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, এতে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলবে। স্থানীয়দের মধ্যেও রয়েছে চাপা ক্ষোভ। তবে নতুন গাছ লাগানোর তাগিদ দিয়েছেন অনেকেই।

টাঙ্গাইল শহরের কাগমারী এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, সড়ক সম্প্রসারণ করতে সড়কের দুই পাশের পুরাতন গাছগুলো শ্রমিকরা কাটচ্ছেন। কাটা হবে ১ হাজার ৯টি ছোটবড় গাছ। এর মধ্যে অর্ধশত বছরেরও পুরাতন গাছ রয়েছে। স্থানীয়রা জানান, সড়কের উন্নয়ন করা দরকার। কিন্তু এতো গাছ কাটলে পরিবেশেরও ক্ষতি হবে। ফলে যতটা সম্ভব গাছগুলো রক্ষা করে কাজ করা দরকার।

সওজ সূত্রে জানা যায়, মানিকগঞ্জের বরাংগাইল থেকে টাঙ্গাইল শহর পর্যন্ত ৫৯ দশমিক ৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ মহাসড়কের উন্নয়নকরণ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। এরমধ্যে টাঙ্গাইল অংশে পড়েছে ৪০ কিলোমিটার। এ প্রকল্পের আওতায় সড়কটি ১৮ ফুট থেকে বাড়িয়ে ৩৪ ফুট প্রশস্ত করা হবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ভূমি অধিগ্রহণসহ মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৬৩৫ কোটি টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গাছ কাটার কাজ চলছে। কাগমারী সেতুর পর মওলানা মোহাম্মদ আলী কলেজ গেট পর্যন্ত বেশ কয়েকটি বড়বড় গাছ কাটা হচ্ছে। সড়কের বিভিন্নস্থানে বড় বড় আম, জাম, কাঁঠাল, কড়ই, মেহগনিসহ বিভিন্ন জাতের গাছ কাটা হচ্ছে। ইতোমধ্যে গাছগুলোর ডালপালা কেটে উপড়ে ফেলার প্রস্তুতি চলছে। আবার গাছ কেটে খন্ড খন্ড গুড়ি সড়কের পাশেই ফেলে রাখা হয়েছে। পুরো সড়ক মরুভূমির মতো মনে হচ্ছে। ছায়ার কোন বালাই নেই।
এ সড়কে চলাচলকারী সিএনজি চালক মোবারক হোসেন বলেন, সড়কে গাড়ি চালাতে ক্লান্ত হতাম না। কারণ পুরো রাস্তায় শতশত গাছ। যেনো বনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখন রোদের তাপে পুড়তে হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা কবির বলেন, আমরা উন্নয়ন চাই। তবে এতো গাছ না কাটলেও পারতো। গাছ কাটার ফলে এলাকাবাসী, পথচারী ও ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধা হবে। চাই উন্নয়নের পরে দু’পাশে আবার নতুন গাছ লাগানো হোক।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের বৃক্ষপালন বিভাগের নির্বাহী কর্মকর্তা মীর মুকুট আবু সাইদ জানান, আরিচা-ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর-টাঙ্গাইল সড়কে ১২ টি লটে ১ হাজার ৯টি গাছ কাটা হচ্ছে। গাছগুলোর জরিপ মূল্য ধরা হয়েছিল ১৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিক্রি হয়েছে ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকায়। সড়ক প্রশস্ত করার পর পুনরায় দুই পাশে গাছ লাগানো হবে।

তিনি আরও জানান, চারটি প্রতিষ্ঠান নিলামে অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে সর্বোচ্চ দরদাত একজন ঠিকাদার দরপত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত হয়ে গাছগুলো কাটছেন।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক এএসএম সাইফুল্লাহ বলেন, যে গাছগুলো কাটা হচ্ছে তা শতবর্ষী। গাছগুলো কেটে রাস্তার যে উন্নয়ন করা হচ্ছে সেগুলো গাছ রেখে কিভাবে করা যায় সেটি আগে ঠিক করা উচিত। হুট করেই গাছ কেটে ফেলা যায়। কিন্তু একটি গাছ পরিণত হতে দীর্ঘ সময় লাগে এবং একটি গাছের সাথে অনেক প্রাণীর জীবনের অস্তিত্ব, আবহাওয়া এবং জলবায়ু নিবিড় সম্পর্ক। সব কিছু বিবেচনায় গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যশোর রোডের শতবর্ষী গাছগুলো কাটা শুরু হলে জনগনের প্রতিরোধে তা বন্ধ হয়েছিল। পেট্রোপল বন্দরের পরে ভারতীয় অংশে গাছ সড়ক দ্বীপে রেখে ৪ লেনের সড়ক নির্মান করা হয়েছে। প্রয়োজনে আমরা সেখান থেকে উদাহরণ নিয়ে হলেও গাছ গুলো রেখে আমাদের ৪ লেনের রাস্তা নির্মাণ করতে পারি।

পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, নির্বিচারে অসংখ্য গাছ কাটা হচ্ছে, কিন্তু দেখার বাঁধা দেওয়ার কেউই নেই। এতো গাছ কাটার ফলে যে কি পরিমাণ ক্ষতি হলো সেটা পরিমাণ করা যাবে না। পুরনো গাছগুলো ছায়া দেয়, ফল দেয়, অক্সিজেন দেয়। অথচ সচেতন হয়ে পুরোনো গাছ রক্ষা করার কথা আমরা ভাবি না। আমরা প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিবো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *