মাধবপুরে ৫টি চা বাগানে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, কমেছে দাম

মাধবপুরে ৫টি চা বাগানে বেড়েছে উৎপাদন ব্যয়, কমেছে দাম

জেলা

হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, হবিগঞ্জ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের ভবিষ্যৎ নিয়ে বাগান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ হতাশার মধ্যে পড়েছেন। করোনাকালীন সময়ের পর থেকে গত ৪ বছর ধরে লোকসান টানতে হচ্ছে বাগানগুলোকে। দিনে দিনে লোকসানের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। গত ৪ বছরে শ্রমিকের মজুরি, গ্যাস, বিদ্যুৎ, আবাসন খরচ ও ঔষধ সহ বিভিন্ন উৎপাদন খরচ কয়েক গুণ বেড়েছে। কিন্তু সে অনুযায়ী চায়ের চাহিদা ও বাজার দর বৃদ্ধি পায়নি। এ অবস্থায় ৫টি চা বাগানের ব্যাংক দেনার পরিমাণ বেড়ে গেছে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এখন ঋণের পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে মাধবপুর উপজেলার ৫ টি চা বাগান লোকসানের মধ্যে পড়ে যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে। মাধবপুর উপজেলার ৫টি চা বাগানের মধ্যে তেলিয়াপাড়া ও জগদীশপুর ৫১ শতাংশ মালিকানা নিয়ে ন্যাশনাল টি কোম্পানী ১২টি চা বাগানের মধ্যে এ দুটি চা বাগানও পরিচালনা করছেন। সুরমা, নোয়াপাড়া ও বৈকন্ঠপুর চা বাগান ব্যাক্তি মালিকানাধীন। নোয়াপাড়া চা বাগানের ডেপুটি ম্যানেজার সোহাগ মাহামুদ বলেন, ব্রিটিশ ফিনলে কোম্পানী থেকে তৎকালিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী মুর্শেদ খান বাগানটি ক্রয় করে পরিচালনা করে আসছেন। বাগানে কারখানা বর্ধিতকরন সহ নতুন বাগান সৃজন করে চায়ের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে চা বাগানে প্রাকৃতিক দূর্যোগ বিশেষ করে খরার কারনে উৎপাদন কমে যাওয়ায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। করোনা মহামারির পর থেকে নোয়াপাড়া চাবাগানে উৎপাদিত চায়ের ভাল বাজার না পাওয়ায় লোকসান দিতে হচ্ছে। ২০২২ সালে চাশ্রমিকদের বেতন বৃদ্ধির দাবিতে টানা ১৮দিন বাগান বন্ধের কারনে ওই অর্থ বছরে লোকসানের পরিমান আরো বেড়েছে। তাদের মতে ভারত থেকে চোরাই পথে নিম্নমানের চাপাতা বাংলাদেশে প্রবেশের কারনে দেশের বাজারে চায়ের বাজার দর দিন দিন কমছে। বৈকন্ঠপুর চা বাগানের ব্যবস্থপক সামসুল ইসলাম জানান, বৈকন্ঠপুর চাবাগানটি একটি ছোট বাগান, শ্রমিক সংখ্যা ৪শর মত। আমানত শাহ গ্রুপ ৫/৬ বছর আগে বাগানটির মালিকানা ক্রয় করে বাগানে উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোটা অংকের টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই বাগানে লাভের মুখ দেখেনি। বছর বছর লোকসানের বোঝা টানতে টানতে এক সময় বাগানটি বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জগদীশপুর চা বাগানের একটি সূত্র জানায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানীর মালিকানাধীন জগদীশপুর চা বাগানের অবস্থাও তেমন ভাল নয়। চা বাগানের ভেতরে গত কয়েক বছর ধরে চায়ের গাছ মরে যাওয়ায় চায়ের উৎপাদন অনেক কমে গেছে। চায়ের গুণগত মানও তেমন ভাল নয়। নতুন করে পতিত জায়গায় ছোট চা গাছ লাগানোর পর পরিচর্যার অভাবে সৃজিত নতুন বাগান সফল হয়নি। শ্রমিকের মজুরি ১৫০ টাকা থেকে বেড়ে ১৭০ টাকা হওয়ায় বাগান কর্তৃপক্ষকে এখন অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। একদিকে সব মিলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। কমেছে চায়ের উৎপাদন ও বাজার দর। একারণে গত ৮/১০ বছর ধরে লাভের মুখ দেখতে পারছেনা বাগান কর্তৃপক্ষ। এশিয়ার অন্যতম বড় চা বাগান সুরমা। শ্রমিক সংখ্যা ২২শ। ৪ হাজার হেক্টর জমিতে চায়ের চাষাবাদ হচ্ছে। ২০/২৫ বছর আগে বাগানটি অবস্থা তেমন ভাল ছিলনা। কিন্তু গত ১৭ বছর ধরে সুরমা চা বাগানের বিশাল এলাকা জুড়ে উচুঁ নিচু ভুমিতে নতুন চা গাছ লাগানোর কারণে বাগানে কচি গুণগত চাপাতার উৎপাদন বেড়ে গেছে। এ কারনে সুরমা চাবাগানে কারখানার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। ভারত থেকে বিভিন্ন যন্ত্রাংশ এনে সংযোজন করেছে। বিশাল এই বাগানে উৎপাদন খরচের পাশাপাশি চায়ের নিলাম বাজারে ভাল দর না পাওয়ায় লোকসানের পরিমান বেড়ে চলেছে। সুরমা চাবাগানের ব্যবস্থাপক বাবুল সরকার জানান, করোনাকালিন সময়ে সারাদেশে লকডাউন থাকার কারনে দেশের অভ্যন্তরে ভোক্তা পর্যায়ে চায়ের চাহিদা কমে যাওয়ায় নিলামের বাজারে চায়ের দাম ছিল খুবই কম। এ বছর খরার পরিমান খুবই বেশি। আষাঢ়-শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির পরিমাণ অনেক কম। এ কারণে বাগানের ভেতর নতুন চা পাতা বেশি সংগ্রহ হচ্ছেনা। তেলিয়াপাড়া চা বাগানে চায়ের উৎপাদন বাড়লেও বাজার দর ভাল না থাকায় লোকসানের মুখে পড়ছে চা বাগানটি। বাগান সংশ্লিষ্টদের অভিমত লোকসান কাটিয়ে উঠতে সরকারি ভাবে চাবাগানে স্বপ্ল সুদে ঋণ ও প্রণোদনা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হলে চা বাগান ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। এছাড়া অবৈধ পথে ভারত থেকে চোরাই চা পাতা বন্ধ সহ সরকারিভাবে চায়ের বাজার দর নির্ধারণ করে দিলে দেশের অন্যতম চা শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে। অন্যতায় সবুজ চা গাছ ও চা শিল্প কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *