মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে বুদ্ধিমান ও শিল্পী বাবুই পাখি

মাধবপুরে হারিয়ে যাচ্ছে বুদ্ধিমান ও শিল্পী বাবুই পাখি

জেলা

হীরেশ ভট্টাচার্য্য হিরো, মাধবপুর প্রতিনিধি:
বাবুই পাখি গ্রাম বাংলার ছোট একটি পাখির নাম। এই পাখি যেমন বুদ্ধিমান তেমনি শিল্পীর মত অপরূপ তার কারুকাজ। বাবুই পাখি দেখতে অনেকটা চড়ুই পাখির মত। তবে আকারে একটু বড়, তারা ঝাঁক বেঁধে তাল গাছের চূড়ায় বসবাস করে। এরা খুব পরিশ্রমী পাখি। গ্রামগঞ্জে এই বাবুই পাখি আগের মত চোখে পড়ে না। বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়ুই, কুঁড়ে ঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই। আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে। বাবুই হাসিয়া কহে সন্দেহ কি তাই, কষ্ট পাই তবু থাকি নিজের বাসায়। পাকা হোক তবু ভাই পরেরও বাসা, নিজ হাতে গড়া মোড় কাঁচা ঘর খাসা। রজনীকান্ত সেনের কবিতার সেই বাবুই পাখি আজ হারিয়ে যাচ্ছে যার ফলে এখন আর আগের মতো বাবুই পাখি দেখা যায় না। একশ্রেণীর লোক শিকার করছে বাবুই পাখি অন্য দিকে খাঁচায় বন্দী করে বেঁচা কেনাও হচ্ছে এ পাখি। হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার বাঘাসুরা, ছাতিয়াইন, নোয়াপাড়া, জগদীশপুর, শাহজাহানপুর, বহরা, ধর্মঘর, আদাঐর ও পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে তাল গাছের চূড়ায় এই শৈলী পাখির বাসা চোখে পরত। তাদের কলকাকলিতে মুখরিত থাকত এলাকা। কিন্তু এখন আর তাল গাছও নেই তাদের দেখাও মিলে না। বাবুই পাখিরা সাধারণত তাল গাছের চূড়ায় বাসা বাঁধে। এই বাবুই পাখির বাসা গ্রাম গঞ্জের একটি ঐতিহ্যবাহী দৃশ্য। বাবুই পাখি নিয়ে কবি সাহ্যিতিকরা অনেক গল্প ও কবিতা লিখেছেন। তাল গাছের পাতার নিচের অংশে বাবুই পাখি বাসা তৈরি করে। বাবুই পাখির বাসা বানানোর নির্মাণ শৈলী, কারিগরী দক্ষতা দেখে আধুনিক যুগের প্রকৌশলীরা ভাবিয়ে তোলে। তাল পাতার ছেড়া তন্তু দিয়ে তারা বাসা বাঁধে। পাতা ছিড়ে এনে সূক্ষèভাবে ঠোঁট দিয়ে তা গাঁথুনী করে বাসা তৈরী করে তাই এর নাম শিল্পী বাবুই পাখি। ঝড় বৃষ্টিতেও সেই বাসা ভেঙ্গে পড়ে না। তাল পাতার বাসায় কোন ভাবেই জল ঢোকে না। এ বাসায় প্রবেশ ও বাহির হওয়ার জন্য একাধিক দরজা থাকে। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য। অন্ধকার ঘরকে কিভাবে আলোকিত করতে হয় তাও বাবুই পাখিরা ভাল ভাবে জানে। বাবুই পাখির বাসার ভিতর আধুনিক যুগের মত লাইটের ব্যবস্থা আছে। বাসার ভিতর একটু গোবর রাখা হয় তার ভিতরে জোনাকি পোকার মাথাটি ঢুকিয়ে দেয়। ফলে জোনাকির আলোতে বাসা আলোকিত হয়ে উঠে। মাধবপুর পৌরসভার মেয়র হাবিবুর রহমান মানিক জানান, ছোট বেলায় তাল গাছের নিচে খেলাধুলা করতাম। তারা এ বাসা কিভাবে বুনন করে তাকিয়ে দেখতাম এবং ঝড়বৃষ্টিতে কোন কোন সময় বাসা একদুইটা খসে পড়লে তা নিয়ে আমরা বাড়িতে খেলা করতাম। চিন্তা করতাম তারা কিভাবে এটা তৈরী করে। এখন আর চোখে পড়ে না বাবুই পাখির দেখা। এখন নতুন প্রজন্মও এগুলো আর দেখতে পায় না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *