গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুরে কারখানার ভেতরে মাদক সেবনে বাঁধা দেয়ায় কারখানা ম্যানেজারকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে মাদকসেবীরা। প্রায় আট বছর আগে গাজীপুরের টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এ ঘটনায় তিন আসামীকে গ্রেফতার করে বিজ্ঞ আদালতে পাঠিয়েছে পিবিআই।
পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থানাধীন সুটিয়াকাঠি এলাকার আউয়াল তালুকদারের ছেলে মো. হাসান (৪৫) প্রায় ৮ বছরে আগে টঙ্গীর দত্তপাড়া এলাকার একটি ফার্ণিচারের দোকানে ম্যানেজার হিসেবে কাজ করতেন। প্রায় সময়ই ওই এলাকার সংঘবদ্ধ মাদক সেবনকারী ও ব্যবসায়ীরা ওই ফার্ণিচার কারখানার মধ্যে মাদক সেবন করতে চাইতো। ২০১৫ সালের ২৭ জানুয়ারিতে মাদক সেবনকারী আজিজুল, হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান, জাফর ও তাদের সহযোগী কয়েকজন মাদকসেবনের উদ্দেশ্যে কারখানায় প্রবেশের চেষ্টাকালে ম্যানেজার হাসানের সাথে তাদের বাগবিতন্ডা হয়। চক্রটি ভেতরে প্রবেশ করে মাদক সেবন শুরু করলে হাসান তাদেরকে মাদক সেবনে নিষেধ করে। এতে আজিজুল, রোমানরা ক্ষিপ্ত হয়ে কারখানার ভেতরে থাকা স্ক্রু-ড্রাইভার, হাতুড়িসহ ফার্ণিচার সরঞ্জাম দিয়ে হাসানকে মারাত্মক আঘাত করে। হাসান অচেতন হয়ে পড়লে বাইরে থেকে তালাবদ্ধ করে চলে যায় মাদকসেবীরা।
পরে স্বজনরা হাসানের সাথে বার বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও না পেয়ে ২৯ জানুয়ারি রাতে কারখানা মালিকসহ অন্যান্যরা কারখানার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে হাসানের মৃতদেহ দেখতে পায়। তারা দেখতে পায় হাসানের নাকের মাথার অংশ নেই, মুখে চোয়ালের নিচে মাংস নেই, ক্ষত এবং বাম বুকে স্ক্রু ড্রাইভার দ্বারা বুকের ভেতরে কালো গেঞ্জি মোড়ানো। আরও দেখতে পায় অন্ডকোষের বাম পাশের মাংস নেই। পরে পুলিশে খবর দিলে সুরহতাল রিপোর্ট প্রস্তুত করে লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে টঙ্গী থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ভিকটিমের ভাই মো. বাবু তালুকদার বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামীদের বিরুদ্ধে টঙ্গী থানায় এজাহার দায়ের করলে পুলিশ ঘটনাটি ২বছর ২০দিন তদন্ত করে। পরে পুলিশ সদর দপ্তরের নির্দেশে সিআইডি আড়াই বছর তদন্ত করে চূড়ান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করে। আদালত অধিকতর তদন্তের জন্য মামলাটি পিবিআই গাজীপুরকে প্রদান করলে পিবিআই হত্যার রহস্য উদঘাটন করেন এবং জড়িত তিনজনকে গ্রেফতার করেন। মামলাটির তদন্তকারী পুলিশ পরিদর্শক (নি:) মো. হাফিজুর রহমান পিপিএম জানান, গ্রেফতারকৃত আজিজুল ইসলাম (২৮) টঙ্গী পূর্ব থানাধীন এরশাদনগর এলাকার আলী আকবর হোসেনের ছেলে, মো. হুমায়ুন কবির ওরফে রোমান (৪০) দত্তপাড়া এলাকার মৃত আ. খালেক সরদারের ছেলে এবং মো. জাফর ইকবাল (৪৩) দত্তপাড়া হাউজবিল্ডিং এলাকার আব্দুল হালিম চৌধুরীর ছেলে।
পিবিআইয়ে’র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান বিপিএম বলেন, কারখানার ভেতরে মাদক সেবনে বাধা দেয়ায় ভিকটিমকে হাতুড়ি, বাটাল ও স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে আঘাত করে হত্যাকান্ডটি ঘটানো হয়েছে। ১৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেফতারকৃত আজিজুল ও রোমান নিজেদের জড়িয়ে বিস্তারিত বর্ণনা করে বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।