ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিঃ
অবশেষে দীর্ঘ ১ মাস পর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নারী ও শিশু -১ আদালত ব্যতীত সব আদালতের উপর থেকে বর্জন কর্মসূচী প্রত্যাহার করে নিয়েছে জেলা আইনজীবী সমিতি। আজ থেকে ১টি আদালত ব্যতীত সকল আদালতের বিচারিক কার্যক্রমে অংশ নিবেন আইনজীবীরা। আইনজীবীদের দাবী পূরণে আইনমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদসহ সংশ্লিষ্ট সকলের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে গতকাল দুপুরে বিশেষ সাধারণ সভা শেষে এ সিদ্ধান্তের কথা জানান জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডঃ তানভীর ভুইয়া। তিনি জানান, আদালতের সমস্যা নিরসনে গত রবিবার আইনমন্ত্রী এডঃ আনিসুল হক, স্থানীয় সংসদ সদস্য র,আ,ম উবায়দুল মোকতাদির চৌধুরী আইন সচিব গোলাম সারোয়ারসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে বৈঠক হয়েছে। সেখানে আমরা বলেছি, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর মোহাম্মদ ফারুকের বিষয়ে কোনো ছাড় আইনজীবীরা দেবেন না। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। তিনি জেলা জজ শারমিন নিগারের বিষয়ে আমাদের নমনীয় হতে বলেছেন। সেই আলোকে বিশেষ সাধারণ সভা শেষে নারী ও শিশু-১ আদালত ব্যতীত সব আদালতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জেলা আইনজীবী সমিতির সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক এডঃ মফিজুর রহমান বাবুল জানান, কোর্টবন্ধকালীন সময়ে ৬০০ হাজতী রয়েছে যাদের জামিন কাজ ব্যাহত হয়েছে। আইনজীবীরা সেই মানবিক দিক বিবেচনা করে আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেয়।
এদিকে জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল বলেন, দীর্ঘদিন কোট বন্ধ থাকার কারণে প্রতিদিন ১৫০০ মামলা করে অন্তত ৩০/৪০ হাজার মামলার জটলা সৃষ্টি হয়েছে। আজ থেকে আইনজীবীরা আদালতে এলে বিচারপ্রার্থী জনগনের দুর্ভোগ কমবে।
এদিকে, আদালতের কার্যক্রম শুরু হওয়ার খবরে দুর্ভোগে থাকা বিচারপ্রার্থীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে।
উল্লেখ্য, গত ১ ডিসেম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এ আইনজীবীরা মামলা দাখিল করতে গেলে বিচারক মোহাম্মদ ফারুক মামলা না নিয়ে আইনজীবীদের সম্পর্কে আপত্তিকর মন্তব্য করেন বলে অভিযোগ করেন আইনজীবীরা। এ ঘটনায় ২৬ ডিসেম্বর সমিতির সভা করে আইনজীবীরা ১ জানুয়ারি থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জনের ঘোষণা দেয়। এদিকে বিচারকের সঙ্গে অশোভন আচরণের অভিযোগে ৪ জানুয়ারি কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারিরা। এ অবস্থায় জেলা জজ, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ ও আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের অপসারণ চেয়ে গত ৫ জানুয়ারী থেকে পুরো আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন আইনজীবীরা। একপর্যায়ে আইনমন্ত্রীর আশ্বাসে জেলা ও দায়রা জজ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর আদালত বর্জন অব্যাহত রেখে বাকি সব আদালতের কার্যক্রমে অংশ নেওয়া শুরু করে আইনজীবীরা। তবে গত ৭ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ দফায় বাড়ানো কর্মসূচীর শেষ দিনেও তাদের অপসারণ না করায় আবারো সব আদালত বর্জনের ঘোষনা দেয় আইনজীবীরা। তবে গত বুধবার আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলামের বদলীর আদেশ হওয়ায় আইনজীবীদের মাঝে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
এছাড়াও বিচারকের সাথে অশোভন আচরণ ও অশালীন শ্লোগান দেয়ার অভিযোগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আইনজীবী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২৪ আইনজীবীকে দু’দফায় তলব করেছে উচ্চ আদালত। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইনজীবীদের সাথে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সাথে বৈঠকের পর একটি আদালত বাদে বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।