বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শিক্ষার্থীকে এসিড নিক্ষেপ, ১৭ বছর পর শিক্ষকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় শিক্ষার্থীকে এসিড নিক্ষেপ, ১৭ বছর পর শিক্ষকের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

জেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁয় বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করায় অনার্স ২য় বর্ষের এক শিক্ষার্থীকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় মোস্তফা কামাল (৫২) নামে এক ক্যারাতে শিক্ষককে যাবজ্জীবন কারাদন্ড দিয়েছেন আদালত। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) বিকেল ৪টার দিকে নওগাঁর এসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ আদালতের বিচারক নূরুজ্জামান সরকার এ কারাদন্ডাদেশ প্রদান করেন। একই সাথে তাকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ডও প্রদান করা হয়।

দন্ডপ্রাপ্ত মোস্তফা কামাল শহরের রজাকপুর খলিফাপাড়া মহল্লার মৃত জনাব আলীর ছেলে। রায় ঘোষণার সময় তিনি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন, অ্যাডভোকেট মোজাহার আলী।

আদালত সূত্রে জানা যায়, শহরের পার নওগাঁ মধ্যপাড়া মহল্লার বাসিন্দা হালিমা আক্তার রেখা ১৭ বছর আগে নওগাঁ সরকারী কলেজে অনার্স ২য় বর্ষে পড়াশোনা করতেন। পাশাপাশি একটি বেসরকারি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা করতেন তিনি। কলেজে পড়া অবস্থায় হালিমা ও তার ভাই ওমর ফারুক শহরের মুক্তির মোড়ে ইয়াংকিং মার্শাল আর্ট একাডেমীতে ক্যারাতে শিখতে ৬ মাসের প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সুবাদে ক্যারাতে শিক্ষক মোস্তফা কামালের সঙ্গে তাঁদের পরিচয়। এক পর্যায়ে মোস্তফা কামাল বিবাহিত হওয়া সত্ত্বেও হালিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তা প্রত্যাখান করাতেই ঘটে বিপত্তি। বিয়েতে রাজি না হওয়ায় পরের দিন ২০০৬ সালের ১১ মে ভোর ৫টার দিকে হালিমার বাড়িতে ঢুকে তাকে এসিড নিক্ষেপ করেন মোস্তফা কামাল। এতে শরীরের বেশ কয়েকটি অংশ মারত্বকভাবে ঝলসে যায় হালিমার। তাৎক্ষণিক হালিমাকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে ভর্তি করে ওইদিনই থানায় মোস্তফা কামালের বিরুদ্ধে এসিড অপরাধ দমন আইন ২০০২ এর ৫ (ক) ও (খ) ধারায় মামলা করেন তার বাবা রহমত আলী মন্ডল। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে চলে এ মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) মামলাটির রায়ের তারিখ নির্ধারন করেন নওগাঁর এসিড অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-৫ আদালতের বিচারক নূরুজ্জামান সরকার। মামলায় দীর্ঘ শুনানি শেষে এসিড অপরাধ দমন আইনের-৫ (ক) ধারার অপরাধটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় মোস্তফা কামালকে যাবজ্জীবন কারাদন্ডাদেশ ও নগদ ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড প্রদান করা হয়।

মোস্তফা কামালের স্ত্রী সম্পা আক্তার বলেন, অন্যায়ভাবে আমার স্বামীকে এই সাজা দেয়া হয়েছে। এখানে ন্যায় বিচার করা হয়নি। বিচারক বাদীর আবেগকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। তাই শীঘ্রই উচ্চ আদালতে আপিল করবো।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মোজাহার আলী বলেন, এ রায়ের মধ্য দিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এসিড নিক্ষেপের শাস্তি কতটা ভয়বহ তা সম্পর্কে সমাজে একটি মেসেজ পৌঁছাবে। এতে আগামীতে এই ধরনের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *