চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধিঃ
মিষ্টি জাতের আম যখন সংগ্রহ শেষ তখন গাছে গাছে এখনো দোল খাচ্ছে বারি আম-১২। সুস্বাদু এ নাবী জাতটি হতে পারে আম চাষীদের সমৃদ্ধির সোপান।
বাংলাদেশে প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ হেক্টর জমি হতে প্রায় ২৫ লাখ টন আম উৎপাদন হয়। এর প্রায় এক-তৃতীয়াংশই রাজশাহী-চাঁপাইনবাবগঞ্জ অঞ্চলের। এ উৎপাদন হয় মুলত: মে-জুলাই মাসে। মাত্র ৩ মাসে এ বিপুল উৎপাদনে চাষীরা বিপাকে পড়ে। মূল্য কমে গিয়ে আম চাষীরা লোকসানের সম্মুখীন হয়ে থাকে।
আম দ্রুত পচনশীল বিধায় বেশী দিন সংরক্ষন করা যায় না। অপরদিকে পরিবহন ও বিপণন ব্যবস্থাও আধুনিক নয়। স্পেশালাইজড কোল্ড স্টোরেজ, কুলিং ভ্যান, ভ্যাপার হিট ট্রিটমেন্ট-এসব সুবিধা এখনো সেভাবে গড়ে ওঠেনি। আবার অল্প সময়ে এত বেশী আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি করাও দুরূহ ব্যাপার। প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানি বৃদ্ধি পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি ঘটাতে পারে বটে, তবে উৎপাদন প্রাচুর্য ঘটিত মূল্যহ্রাস ঠেকাতে তা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া রপ্তানির ক্ষেত্রে নিরাপদ উৎপাদন, পরিবহন ব্যয়সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রতিযোগিতা সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে।
এক্ষেত্রে যুৎসই সমাধান হতে পারে জাত উদ্ভাবনের মাধ্যমে উৎপাদনকালকে দীর্ঘায়িত করে আগষ্ট-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া। এ লক্ষ্যে আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¦ গবেষণা কেন্দ্র বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গবেষণা করে ২০১৯ সালে বারি আম-১২ অবমুক্ত করেছে। এ জাতটি নাবী, আঁশ বিহীন ও সুমিষ্ট (টিএসএস-২৪)।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ মোখলেসুর রহমান জানান, যখন বাজারে অন্যান্য আম শেষ হয়ে যায় তখন বারি আম-১২ পরিপক্কতা শুরু হয় আগষ্ট মাসের মাঝামাঝি। এ জাতটিকে স্থানীয়ভাবে অনেকে গৌড়মতি নামেও অভিহিত করে থাকেন। মৌসুমের শেষে তাজা বারি আম-১২ উচ্চমূল্যে বিক্রি হয়। এ আম চাষে লোকসানের সম্ভাবনা নেই বরং রয়েছে অধিক মুনাফা ও সমৃদ্ধির হাতছানি।
এ প্রসঙ্গে প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ কামরুল ইসলাম বলেন, বিচক্ষণ ও অগ্রণী চাষীরা পিক মেীসুমী জাতের পরিবর্তে সুমিষ্ট নাবী জাত বারি আম-১২ চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত¦ গবেষণা কেন্দ্র এ জাতের বাগান স্থাপনে সহযোগিতা ও পরামর্শ প্রদান করে থাকে। এ জাতটি দ্রুত বিস্তার লাভ করবে বলে আশা করা যায়।