গাজীপুর প্রতিনিধি :
গাজীপুর মহানগরীর পূবাইলের মাজুখান এলাকায় ফারুকের মুরগী দোকানে কাজ করতেন নাসির মিয়া (২৮)। কয়েক বছর যাবত দোকানের কর্মচারী হিসেবে মুরগি ও পশুর খাদ্য বিক্রি করতেন তিনি। ফিড খেয়ে ফেলা মুরগী তাড়ানোর জন্য খেলনা পিস্তল রাখতেন নাসির। খেলনা পিস্তল দেখে প্রায়ই দোকানে আসতেন এবং পিস্তলের সাথে খেলাধূলা করতেন দোকানের পাশের গলির ৬ বছর বয়সী শিশু সিহাব। ফলে শিশু সিহাব ও দোকানী নাসিরের মধ্যে সুসম্পর্কের তৈরি হয়, সিহাব নাসিরকে মুরগি চাচ্চু বলেও ডাকতো।
এরই মধ্যে একদিন দুপুরে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ায় সিহাব দৌড়ে এসে নাসিরের রুমে প্রবেশ করে। নাসিরের মাথায় নোংরা চিন্তা আসে এবং সে সিহাবকে বলাৎকারের চেষ্টা করে। সিহাব চিৎকার করলে নাসির তার মুখ চেপে ধরলে সিহাবের নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বিষয়টি টের পেয়ে নাসির ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ রাখে এবং পরদিন ভোরে সিহাবের মৃতদেহ পাশের বাড়ির সালাম মুন্সির বাড়ির পাশে ফেলে রাখে। দুই দিন চট্টগ্রাম অবস্থান করে ফিরে এসে এক সপ্তাহ পরে ৪০ দিনের জন্য চিল্লায় (তাবলিগে) চলে যায় নাসির।
২০২১ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নগরীর পূবাইলের মাজুখান উত্তরপাড়া এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটে। ২৬ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টার দিকে সালাম মুন্সির বাড়ির পাশ থেকে লাশটি উদ্ধার করে সিহাবের পরিবার। পরে লাশটি পুলিশে সোর্পদ করলে পুলিশ ময়নাতদন্তের জন্য মৃতদেহটি হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে। ভিকটিম সিহাবের পরিবার জিএমপি’র পূবাইল থানায় অজ্ঞাতনামা আসামিদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করে। থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে কোন কিছু বের করতে না পারায় পিবিআই গাজীপুর জেলাকে তদন্তের নির্দেশ দেয় পিবিআই সদর দপ্তর। গাজীপুর জেলা পিবিআইয়ের পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মো. রফিকুল মামলাটি তদন্ত করে রহস্য উদঘাটন করে আসামী নাসিরকে গ্রেফতার করে।
নাসির মিয়া (২৮) নোয়াখালীর কবিরহাট থানাধীন সোনাপুর জমিদারহাট (পাক মুন্সির হাট) এলাকার মো. কামাল মিয়ার সন্তান এবং তিনি পূবাইলের মাজুখান বাগেরটেক এলাকার সাঈদের বাড়ির ভাড়াটিয়া।
পিবিআই গাজীপুর ইউনিটের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ঘটনার সাথে জড়িত একমাত্র আসামী বিকৃত মানসিকতা সম্পন্ন। ল্যাপটপে নীল ছবি দেখে উত্তেজিত হয়ে শিশু সিহাবকে বলৎকারের চেষ্টাকালে পাশবিক নির্যাতনপূর্বক হত্যা করে। নাসির বিস্তারিত বর্ণনা করে গত বৃহস্পতিবার বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে।