সোহেল সানি:
স্বাধীনতা আর মুক্তির সংগ্রামে যেমন করে লেনিন, মহাত্মা গান্ধী, ফিদেল কাস্ত্রো, জর্জ ওয়াশিংটন, লুমুম্বা ও নেলসন ম্যান্ডেলা অবিস্মরণীয় হয়ে আছেন; ঠিক তেমনিভাবে আছেন, আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বছর নরপশু ঘাতকের নৃশংসতায় মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর দৈহিক মৃত্যু হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু তারা কী খুন করতে পেরেছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ? মুছে দিতে পেরেছে তার মহত্ব? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মহান মানুষের মৃত্যু হয় না। বরং মৃত্যুই তাঁদের কাছে পরাজিত হয়।
বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতা, রাষ্ট্রনায়কগণ ও সমাজকর্মীরা একদিকে যেমন শোক জানান, তেমনি তাকে করেন নানা মূল্যায়নও।
বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে কথাটি সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়, সেটি হচ্ছে কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর বিখ্যাত উক্তি: ‘আমি হিমালয় দেখিনি, বঙ্গবন্ধুকে দেখেছি।’ বাঙালির এই মহান নেতাকে নিয়ে এই ছিল তাঁর মূল্যায়ন।
১৯৭৩ সালে তৎকালীন সময়ের এই দুই সংগ্রামী ‘জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন’ সম্মেলনে যোগ দিতে একত্রিত হয়েছিলেন আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে। আর সেই সময়েই এই উক্তিটি করেন কাস্ত্রো। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন বাংলাদেশি এক সাংবাদিকের কাছে বলেছিলেন, ‘নিঃসন্দেহে এটা তোমাদের জাতির জন্য সবচেয়ে বড় শোকের ঘটনা। ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্যও এটি অনেক বড় শোক।’
বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীর মূল্যায়ন ছিলো- ‘শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বের নিপীড়িত মানুষের বন্ধু।’ এভাবে তাকে শুধু বাঙালির একজন নেতা হিসেবেই নয়, বিশ্বের নির্যাতিত মানুষের বন্ধু হিসেবে তুলে ধরেছিলেন ইন্দিরা।
বঙ্গবন্ধুকে সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য’- এই মন্তব্যই করেছিলেন, ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী মানুষের আরেক মহান নেতা ইয়াসির আরাফাত।
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের মতো তেজি এবং গতিশীল নেতা আগামী বিশ বছরের মধ্যে এশিয়া মহাদেশে আর পাওয়া যাবে না- এমনটাই মন্তব্য করেছিলেন মার্কিন রাজনীতিবিদ, কূটনৈতিক ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার, যিনি রিচার্ড নিক্সনের সময়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।
‘শেখ মুজিব, জর্জ ওয়াশিংটন, গান্ধী ও দ্য ভ্যালেরার থেকেও মহান নেতা’- এমন মন্তব্যই করেছিলেন ব্রিটিশ আন্দোলনকারী ও রাজনীতিবিদ লর্ড ফেন্যার ব্রোকওয়ে।
জাপানি বুদ্ধিজীবী মুক্তি ফুকিউরা বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে বলেন, ‘এশিয়ায় তোমাদের শেখ মুজিবের মতো সিংহ হৃদয়বান নেতার জন্ম হবে না বহুকাল।’ সত্যিই হয়নি। বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর আর তেমন সাহসী কণ্ঠস্বর জন্ম নেয়নি এশিয়ায়।’
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর তার সম্পর্কে ব্রিটেনের সাবেক এমপি জেমসলামন্ডের বক্তব্য ছিল- ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশই শুধু এতিম হয়নি। বিশ্ববাসী হারিয়েছে একজন মহান সন্তানকে।’
লন্ডন অবজারভার পত্রিকার এক বিশিষ্ট ব্রিটিশ সাংবাদিক সাইরিল ডুন তার এক নিবন্ধে লিখেছিলেন, বাংলাদেশের হাজার বছরের ইতিহাসে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন এমন একজন নেতা, যার রক্ত, জাতি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং জন্মের পুরোটা জুড়েই ছিল পূর্ণাঙ্গ বাঙালিত্ব।
#লেখকঃ সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।