নিজস্ব প্রতিনিধি:
মানুষের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বিনিয়োগ খাত হিসেবে পরিচিত সঞ্চয়পত্রের আবেদন কমেছে। মূলত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, সুদের হার কমানো এবং সঞ্চয়পত্র কেনার ওপর বিধিনিষেধের কারণেই এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। চলতি অর্থবছরের জুলাই-মার্চ মাসে সঞ্চয়পত্রে নতুন করে জমা হয়েছে ৬২ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা এবং উত্তোলন করা হয়েছে ৬৬ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। অন্য কথায়, বিনিয়োগকারীরা অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে যতটা বিনিয়োগ করেছিল তার চেয়ে ৪,১৬০ কোটি টাকা বেশি সংগ্রহ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, অর্থ উত্তোলনের এই প্রবণতা ২০২৩ অর্থবছরজুড়ে অব্যাহত ছিল। তবে ২০২২ অর্থবছরের একই সময়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় ১৬ হাজার ৫০৪ কোটি টাকা। এ সময় গ্রাহকরা উত্তোলন করেন ৬৪ হাজার ৮২৩ কোটি টাকা। তিনি বিনিয়োগ করেছেন ৮১ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা। দেশে দীর্ঘমেয়াদি ডলার সংকটে পণ্যের আমদানি মূল্য বেড়েছে বলে জানা গেছে। তাই নিত্যপ্রয়োজনীয় কাজে আগের চেয়ে বেশি টাকা খরচ করতে হচ্ছে মানুষকে।
বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, মার্চে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯.৯ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৮.১৩ শতাংশ। অন্যদিকে, মার্চে খাদ্যবহির্ভূত মূল্যস্ফীতি ফেব্রুয়ারিতে ৯.৮২ শতাংশ থেকে সামান্য কমে ৯.৭২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। এদিকে মার্চে মজুরি বৃদ্ধির হার ৭ দশমিক ১৮ শতাংশে পৌঁছেছে, যা আগের মাসে ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মার্চ মাসে মূল্যস্ফীতি ৯.৩৩ শতাংশে পৌঁছেছে, যা সাত মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। এদিকে, সরকার ২০২৩ অর্থবছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্র থেকে ৩৫ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সরকারি সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার পরিমাণ অনেক বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
এ বিষয়ে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর মনে করেন, নিম্ন আয়ের মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে তাদের সঞ্চয় ভাঙতে বাধ্য হচ্ছেন। আসলে সরকার সঞ্চয়পত্র বাড়তে চায় না। কারণ বাজেটের সুদের জন্য সরকারকে প্রতি বছর প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। তিনি আরও বলেন, এতে সরকারের ওপর চাপ বাড়ে।
তিনি বলেন, আমরা অনেক আগেই সরকারকে সঞ্চয়পত্র কমানোর জন্য বলেছিলাম। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তারা অবসর গ্রহণের পর সঞ্চয়পত্র কেনেন। তাই তারাও এটা পুরোপুরি বন্ধ করতে চায় না। যেহেতু সঞ্চয়পত্রে মানুষের বিনিয়োগ এখন কমছে, তাই খুব তাড়াতাড়ি ভালো ফল নাও আসতে পারে। তবে আগামী কয়েক বছরের মধ্যে সঞ্চয়পত্র বিক্রয় কমা সরকারকে স্বস্তি দেবে। সঞ্চয়পত্র কমানোর কারণে বাজেট ঘাটতি পূরণে সরকার যেন সংকটে না পড়ে সেদিকে দৃষ্টি দেন তিনি।