নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাঙ্গির বাম্পার ফলন, বাজারমূল্য ৩ কোটি

নরসিংদীর চরাঞ্চলে বাঙ্গির বাম্পার ফলন, বাজারমূল্য ৩ কোটি

অর্থনীতি জেলা

তারেক পাঠান, নরসিংদী প্রতিনিধি:
নরসিংদীর চরাঞ্চলে এ বছর বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। দিগন্ত জোড়া বিস্তীর্ণ মাঠে যে দিকেই চোখ যায়; সেদিকেই কেবল বাঙ্গি চাষের সমারোহ। চৈত্রের বাহারি মৌসুমি ফল বাঙ্গির বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় জেলার বাঙ্গি চাষিদের মুখে এখন খুশির ঝিলিক। উৎপাদিত বাঙ্গি নিয়ে ভালো লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছেন তারা। তাছাড়া কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় প্রতি বছরই বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। এবার জেলায় প্রায় ১ হাজার টন বাঙ্গি উৎপাদন হওয়ার আশাবাদ কৃষি অধিদপ্তরের। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় ৭৪ হেক্টর জমিতে বাঙ্গির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে রায়পুরা উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে। যার মধ্যে বাঁশগাড়িতে ২০ হেক্টর ও বাকি ১৫ হেক্টর পাড়াতলীর মধ্যনগর, চাঁনপুর ও মির্জাচরে। মেঘনা নদীর তীরঘেঁষে রায়পুরা উপজেলার বাঁশগাড়ি ও পাড়াতলী ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল চর। বিস্তীর্ণ চরের ধান ও মসলা জাতীয় ফসলের পাশাপাশি বাঙ্গি চাষ করা হয়েছে। মাটির ওপর ছড়িয়ে আছে বাঙ্গির সবুজ লতা। লতার ফাঁকে ফাঁকে কাঁচা-পাকা বাঙ্গি শোভা পাচ্ছে।
দেশের বেশিরভাগ চরাঞ্চলেই বাঙ্গি উৎপন্ন হয়। পলি, পলি-দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি বাঙ্গি চাষের জন্য খুবই উপযোগী। বাঙ্গি আকারে বেশ বড় হয়। কাঁচা ফল সবুজ, পাকলে হলুদ হয়। একটু বেশি পেকে গেলে বাঙ্গি সহজে ফেটে যায়। ফলের বাইরের দিকটা মিষ্টি কুমড়ার মতো হালকা ডোরাকাটা খাঁজযুক্ত। এর ভেতরটা ফাঁপা থাকে। খেতে তেমন মিষ্টি নয়। সরেজমিনে জানা যায়, কাঁচা-পাকা বাঙ্গিতে ভরপুর ফসলের মাঠ। জমি থেকেই বাঙ্গি কিনতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারা কৃষকদের সঙ্গে দরদাম করছেন। দুই পক্ষের মধ্যে চলছে বেচাকেনা। জমি থেকে প্রতি পিস বাঙ্গি পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকায়। পরে পাইকারদের মাধ্যমে সুস্বাদু ফলটি পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে। খুচরা পর্যায়ে যা বিক্রি হয়ে ১৫০-২০০ টাকা। কৃষকরা জানান, বাঙ্গি চাষ করতে তেমন খরচ হয় না। রসুন ও বাঙ্গি দুই ফসল একবারে চাষ করেন তারা। প্রথমে রসুন তুলে নেওয়ার পর বাঙ্গি বিক্রি শুরু হয়। ভালো লাভ হওয়ায় প্রতি বছর বাড়ছে বাঙ্গির আবাদ। বাঙ্গি চাষি মো. নজরুল বলেন, ‘এ বছর ৮০ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করেছি। এতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আশা করি জমি থেকে ৩ লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রি করতে পারবো।’ বাঁশগাড়ি গ্রামের কৃষক মোবারক হোসেন বলেন, ‘প্রথমে মরিচ চাষ করতাম। গত ১০ বছর ধরে বাঙ্গি চাষ করি। প্রতি বছর প্রায় ১০ হাজার বাঙ্গি বিক্রি করি। দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছি। যার ফলে পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে চলতে পারছি।’ অপর কৃষক ফজলু মিয়া বলেন, ‘চরাঞ্চলের বাঙ্গি বেলে জাতের। এটি খেতে খুব সুস্বাদু হয়। দেশের অন্য স্থানে এ বাঙ্গি পাওয়া যায় না। যার কারণে দূর-দূরান্ত থেকে পাইকাররা এসে ক্ষেত থেকেই বাঙ্গি কিনে নিয়ে যান।’ নরসিংদী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, ‘জেলায় বাঙ্গির বাম্পার ফলন হয়েছে। যা থেকে উৎপাদন হবে প্রায় ১ হাজার টন বাঙ্গি। যার বাজারমূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। বাঙ্গির চাষ বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কাজ করছে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *