নওগাঁয় শিক্ষার্থী-প্রতিবন্ধী পৃথক দুই ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড

নওগাঁয় শিক্ষার্থী-প্রতিবন্ধী পৃথক দুই ধর্ষণ মামলায় দুই আসামির যাবজ্জীবন কারাদন্ড

জেলা

নওগাঁ প্রতিনিধি:
নওগাঁর পত্নীতলার কাশিপুর এলাকার এক প্রতিবন্ধী নারীকে ধর্ষনের অভিযোগে একই গ্রামের কাজল মালীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ প্রদান করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার।

রাষ্ট্রপক্ষে নিয়োজিত বিশেষ কৌশলী মকবুল হোসেন জানান, পত্নীতলা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের প্রতিবন্ধী নারী ২০২০ সালের ২৭ মার্চ বেলা আড়াইটার সময় তার বাড়ির পিছনে শুকনো পাতা ঝাড়ু দিতে গেলে একই গ্রামের উক্ত আসামী পিছন দিক থেকে জাপটে ধরে মুখে গামছা ভরে দিয়ে তার শয়ন ঘরে নিয়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এই অভিযোগে প্রতিবন্ধী নারীর স্বামী ২০২০ সালের ১ এপ্রিল পত্নীতলা থানায় একটি এজাহার দায়ে করেন। আদালতে আসামী ঘটনার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন। তদন্ত শেষে আসামীর বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০২২ সালে ৮জুন মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহন শুরু হয়ে চলতি বছরের ৩ আগস্ট ১০জন সাক্ষীর সাক্ষ্য সমাপ্ত করা হয়। মঙ্গলবার বেলা ১১টায় উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শ্রবন করা হয়। এরপর অন্য রায় ঘোষণার জন্য ধার্য হলে আদালতের বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার প্রকাশ্যে আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করার আদেশ প্রদান করেন। আসামী পূর্ব থেকেই জেল হাজতে থাকায় তাকে সাজা পরোয়ানা পড়ে শুনানো হয়। আসামী পক্ষে এ্যাডভোকেট সোমেন্দ্রনাথ কুন্ড মামলা পরিচালনা করেন। জরিমানার অর্থ ধর্ষণের শিকার নারীকে প্রদানের নির্দেশ দেন আদালতের বিচারক। অপরদিকে নওগাঁর পোরশার ইলাম গ্রামের এক মাদ্রাসা ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে পলাতক আসামীর যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লাখ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৬ মাসের বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করেছেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার।

রাষ্ট্রপক্ষের বিশেষ কৌশলী মকবুল হোসেন জানান, ২০১৪ সালের ১০ জানুয়ারি উক্ত এলাকার মাদ্রাসা ছাত্রী আসমা খাতুন (ছদ্মনাম) নানীর বাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রাকালে কাশিতাড়া এলাকার হারুন শাহের আম বাগানে নিয়ে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তি জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। রক্তাক্ত ও মুমূর্ষু অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা উক্ত ছাত্রীর নানাকে খবর দিলে তিনি এসে উদ্ধার করে নওগাঁ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা করান। পোরশা থানায় ছাত্রীর নানা অভিযোগ দায়ের করলে তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত শেষে পোরশা থানার গোবরাকুড়ি এলাকার ওসমানের ছেলে হ্যাপির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। আদালতে চলতি মাসের ২৩ তারিখ পর্যন্ত ১১জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন শেষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় যুক্তিতর্ক শ্রবনের জন্য ধার্য থাকলে আসামী পলাতক থাক নিয়ম অনুযায়ী তার পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করেন আইনজীবী এস.এম সারোয়ার হোসেন। উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে জনাকীর্ণ আদালতে পলাতক আসামীকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদন্ড ও এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড অনাদায়ে ৬ মাস বিনাশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত করার রায় ঘোষনা করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক জেলা ও দায়রা জজ মেহেদী হাসান তালুকদার। রায় ঘোষণার সময় আসামী পলাতক থাকার সাজা পরোয়ানাসহ তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করেন আদালতের বিচারক। জরিমানার টাকা ধর্ষণের শিকার নারীকে দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *