দামুড়হুদায় হরেক রকমের ভূয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য এখন তুঙ্গে

দামুড়হুদায় হরেক রকমের ভূয়া সাংবাদিকের দৌরাত্ম্য এখন তুঙ্গে

জেলা

তানজীর ফয়সাল, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গা জেলার দামুড়হুদা উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার অবৈধ আইপিটিভি (ইউটিউব), অনলাইন নিউজ পোর্টাল, ফেইজবুক পেইজ এবং প্রেস লেখা স্টিকার আর আইডি কার্ড ঝুলিয়ে অবাধে বিচরণ করছেন তথাকথিত সাংবাদিকরা। এদের অনেকেই আবার অনলাইন নিউজ পোর্টাল খুলে রেখেছে নিজেদের অপরাধ ঢাকতে, ভুঁইফোড় বিভিন্ন নিউজ পোর্টাল, পত্রিকার কার্ড কিনে ধারণ করেছেন সাংবাদিকের মতো এ মহান পেশাকে। ফলে বিভিন্ন সময়ে এমন সাংবাদিকের পরিবর্তে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় জনমুখী হয়েছে “সাংঘাতিক”। এরই ধারাবাহিকতায় এক শ্রেণির রাজনৈতিক ব্যক্তি, ঔষধ কোম্পানীসহ বিভিন্ন কোম্পানীর বিক্রয় প্রতিনিধি, অশিক্ষিত ব্যক্তিরা কার্ড কিনে এনে বিভিন্ন স্থানে পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকের মতো এ মহান পেশাকে ছোট করছে, ক্ষুণ্ন হচ্ছে প্রকৃত সাংবাদিকদের পেশা। এমন হলুদ সাংবাদিকের নিকট সেবার বিনিময়ে পাচ্ছেন প্রতারনা।

ছায়াতদন্তে জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার প্রায় সকল গ্রামেই এমন সাংবাদিক পরিচয়ে প্রায় শতাধিকেরও বেশি সাংবাদিক নামে সাংঘাতিক রয়েছে। প্রকৃত সাংবাদিকদের গাড়িতে প্রেস বা সাংবাদিক লেখা ষ্টিকার না লেখা থাকলেও হলুদ সাংবাদিকের গাড়িতে ঠিকই লেখা থাকতে দেখা যায় বিভিন্ন বাহারী রঙের সব ষ্টিকার। তবে এরাই আবার অনেক সরকারি সহ বিভিন্ন জাগাতে বেশটা জনপ্রিয়। এদের অনেকেই আবার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারী সহ আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু সদস্য সাথে গড়ে তুলে সক্ষত্যা।এমন বিভিন্ন কারণে উপজেলার মূলধারার সাংবাদিকদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনী সহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরে তৈরি হয়ে আসছেন দূরত্ব। এমন অনেক সাংবাদিক রয়েছেন যারা জানেনা সাংবাদিকের কাজ কি, ইংরেজি শব্দ বাদ ই দিলাম এরা বংলাতে নিজের ঠিকানা লিখতে গেলে ভেঙে ফেলেন কলম, কলমের মতো এ শক্তিশালী অস্ত্রটি কেমন করে ধরতে হয় তাও জানেনা,এরা হয়েছে সাংবাদিক। আর একেই গ্রাম্য অঞ্চলসহ শহরের শিক্ষিতজনেরা “সাংঘাতিক “নামে আখ্যায়িত করে থাকেন বিভিন্ন সময়ে। এখানে মজার বিষয় হলো নাম লিখতে না পারলে কপিপেষ্ট করে সংবাদ পাঠান কিংবা পাঠানও না এরা পরিচয় দেন আমি আমক সাংবাদিক, যা মূলধারার সাংবাদিকদের জন্য লজ্জাজনকও বটে।এদের অবাধ বিচরণ আর ধান্ধাবাজি চলছে বিভিন্ন এলাকায়। অনেকেই অনলাইন খুলেছে অবৈধভাবে, যাদের মূলত ব্যবসা “কার্ড” বানিজ্য। অনলাইন পরিচলনাকারীদের নিকট কার্ড পাচ্ছেন ৫’শ থেকে ৩ হাজার টাকার বিনিময়ে ব্যবসায়ী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ব্যাক্তি। সাংবাদিকের নূন্যতম নিয়মকানুন না জানা অশিক্ষিত কিংবা অর্ধশিক্ষিত তথা কথিত সাংবাদিকদের কারণেই অনেকেই হয়রানির স্বীকার হচ্ছেন।এতে মহান পেশার জন্য সত্যিই লজ্জাজনক। শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সংবাদ তৈরি করতে না পারলেও নামসর্বস্ব কিছু অনলাইন বা প্রত্রিকার কার্ড নিয়ে রাতারাতি হয়ে উঠেছেন সাংবাদিক। এইসব ভুয়া ইউটিউব, অনলাইন নিউজ পোর্টালের বিন্দু মাত্র নেই অনুমোদন।

অনুসন্ধানের ভিত্তিতে জানা, দামুড়হুদা সদর সহ কার্পাসডাঙ্গা, কুড়ালগাছি, পারকৃষ্ণপুর-মদনা, হাউলী , জুড়ানপুর, নতিপোতা,নাটুদাহ সহ দর্শনা পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় সাংবাদিকতার নাম ভাঙিয়ে আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছেন হলুদ সাংবাদিকদের দৌরাত্ম্য। অবৈধভাবে পরিচালিত এ সকল ভুঁইফোড় অনলাইন নিউজ পোর্টাল থেকে অনৈতিক সুবিধা দিয়ে সাংবাদিক কার্ড পেয়েছেন বিভিন্ন ব্যক্তি।এদের মধ্যে রয়েছে, ব্যাবসায়ী,ঔষধ বিক্রেতা,মাদক ব্যাবসায়ী প্রভৃতি।আর কার্ড পেয়ের এদের সকলেই মোটর সাইকেল নিয়ে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে চষে বেড়াচ্ছেন তথা কথিত সাংবাদিকরা। গ্রামগঞ্জে এমন সাংবাদিকে সয়লাব।এরাই প্রকাশ্যে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে আসছে সর্বত্রই।এমন অবৈধ কার্ডের দৌলতে অনেকেই রাতারাতি বনে যাচ্ছেন সাংবাদিক। গত প্রায় ৮-১০ বছর ধরে এমন সাংবাদিকদের অবধ বিচরণ নানার অবৈধ অনৈতিক বাটপারদের দৌরাত্ম্যের জন্য প্রকৃত সাংবাদিকদের তো সমস্যা।এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সুদৃষ্টি দেওয়া জরুরি।

এ বিষয়ে দামুড়হুদা উপজেলার সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তানজীর ফয়সাল বলেন, সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। আজকে নামধারী তথাকথিত সাংবাদিকদের জন্যে পেশাটি হুমকির মুখে। দ্রুত এসকল ভুঁইফোড় পত্রিকার নামধারী সাংবাদিকদের আইনের আওতায় আনার জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত, তা না হলে এ মহান পেশাকে ব্যাঙ্গ করে পেশার সঙ্গে জড়িতরা অপমানিত হতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, ভুঁইফোড় অনিবন্ধিত ভুয়া অনলাইন পরিচয় দিলে জাতীয় সেবা কেন্দ্রের ৯৯৯ এ ফোন করে ধরিয়ে দেন। সর্বোপরি এসকল তথাকথিত, ভুইফোঁড় সাংবাদিকদের থেকে সকলকেই সাবধানতা অবলম্বন করতে পরামর্শ দেন তিনি।

দামুড়হুদা উপজেলার ঐতিহ্যবাহী প্রেসক্লাব এর সভাপতি এম নূরুনবী বলেন, দামুড়হুদা উপজেলা তথা চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাঙের ছাতার মতোই গড়ে তোলা হয়েছে ভুয়া সাংবাদিক।এদের বেশির ভাগ কার্ড দিয়ে ভূয়া সাংবাদিক তৈরি করছেন ভূয়া অনলাইন পোর্টালগুলি।এসকল ভুয়া অনলাইন, ইউটিউব চ্যানেলের লোগো নিজেদের ব্যবহিৃত গাড়িটি প্রেস লিখে দাপিয়ে বেড়িয়ে অপকর্ম করে বেড়াচ্ছেন।এ বিষয়ে জাতীয় প্রেস কাউন্সিল সহ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুরোধও জানিয়েছেন এ সাংবাদিক নেতা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *