মোঃ হিমেল নোমান:
ডিএমপি’র গোয়েন্দা (গুলশান) বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম বিশেষ অভিযান পরিচালনায় ডিবি পরিচয়ে অপহরণকারী ডাকাত দলের ১৬ সদস্য গ্রেফতার এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করেছে। ১০ জুন সোমবার গাজীরপুরের কালিয়াকৈর ও ঢাকার ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন পাড়া ডগাইর ফার্মের মোড় এলাকা হতে মামলার ঘটনায় জড়িত অপহরণ ও ছিনতাইকারী দলের ৭ জন সদস্যসহ ডাকাতি প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফিট রোডস্থ অষ্ট্রলিয়ান স্কুল এর সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে আরো ৯ জন ডাকাত সদস্যকে গ্রেফতার করেছে।
গ্রেফতারকৃতদের নামঃ ১। মো: শহিদুল ইসলাম মাঝি @ শহীদ মাঝি (৫৩), ২। শ্রী সাগর চন্দ্র মালি (৩০), ৩। শাহ আলম হাওলাদার (৩৫), ৪। মোঃ কামরুল ইসলাম @ রমিজ তালুকদার (৩০), ৫। মো: মাকসুদুল মোমিন @ শামীম (৪৩), ৬। মোঃ হাসান (৩৮), ৭। মো: নুরুল ইসলাম (৩০), ৮। মোঃ খলিলুর রহমান @ মাগার (৪৬), ৯। মোঃ আকরাম হোসেন (৩৮), ১০। মোঃ দ্বীন ইসলাম @ কাউছার আহম্মেদ (৩৫), ১১। মোঃ ইলিয়াছ আহম্মেদ @ নিরব (৩২), ১২। মোঃ ফরহাদ আলী (৬৬), ১৩। মোঃ রিয়াজ হোসেন হাওলাদার @ রিয়াজুল (৩১), ১৪। মোঃ শফিকুল ইসলাম লিটন (৫০), ১৫। মোঃ সেরাজুল ইসলাম (৪৪), ১৬। মোঃ জহিরুল ইসলাম পিন্টু (৩৮)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে ৩০ টি মোবাইল ফোন, ১টি মাইক্রোবাস, ডিবি জ্যাকেট, হ্যান্ডকাফ ও ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করা হয়।
উল্লেখ্য, গত ১৭ জুন ২০২৩ মামলার বাদী আব্দুল আজিজ (৩১) ব্যবসায়িক প্রয়োজনে তার ভগ্নিপতির মাধ্যমে ভগ্নিপতির বন্ধুর নিকট হতে ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকা ধার বাবদ ঐ দিন বিকাল অনুমান ১৭.৪৫ ঘটিকায় পল্টন থানাধীন বায়তুল ভিউ মার্কেটের পাশে অবস্থিত কার্পেট মার্কেটের সামনে থেকে কাঁধ ব্যাগের মধ্যে রক্ষিত নগদ ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকা নিয়ে পুরানা পল্টনের মোড় হতে ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল যোগে তার খিলক্ষেতের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। একই তারিখ আনুমানিক রাত ১৯.৫৫ ঘটিকার সময় ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন জিয়া কলোনী এমপি চেকপোষ্টের সামনে পৌঁছা মাত্রই অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন ব্যক্তি মাইক্রোবাসের মাধ্যমে তার ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেলের গতিরোধ করে। অতঃপর অজ্ঞাতনামা ৩/৪ জন আসামী ডিবির পোশাক পরিহিত অবস্থায় এবং ডিবি পরিচয়ে বাদীকে জোরপূর্বক মাইক্রোবাসে উঠিয়ে হাত, পা ও চোখ বেধে এলোপাতাড়িভাবে মারপিট করে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার সাথে থাকা কাধ ব্যাগসহ ব্যাগে রক্ষিত নগদ ১৩,০০,০০০/- (তের লক্ষ) টাকা, মানিব্যাগে রক্ষিত ১৯,০০০/- (ঊনিশ হাজার) টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন জোরপূর্বক নিয়ে নেয় এবং তার বিকাশে এজেন্ট নাম্বার পিন কোড জেনে ৩৭ হাজার টাকা তুলে নিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে ঘোরাফেরা করে উক্ত তারিখ রাত আনুমানিক ২২.০০ ঘটিকার সময় রূপগঞ্জ থানাধীন কাঞ্চন পৌরসভার অন্তর্গত চরপাড়া সাকিনস্থ রাস্তার পাশে ফাঁকা জায়গায় ফেলে যায়।
পরবর্তীতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছায়াতদন্তে নামে গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মামলার বাদীর বক্তব্য পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ডিবি পুলিশ পরিচয়ে অপহরণ ও ছিনতাকারী দলটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। পরবর্তীতে ১০ জুলাই গাজীপুর জেলার কালিয়াকৈর থানাধীন মৌচাক এলাকায় অভিযান চালিয়ে আন্ডারগ্রাউন্ডে থাকা এই চক্রের মূল হোতা ১) মো: শহিদুল ইসলাম মাঝি@ শহীদ মাঝিকে (৫৩) গ্রেফতার করা হয়। শহীদ মাঝির দেয়া তথ্য মতে ঢাকা মহানগরীর ডেমরা থানাধীন পাড়া ডগাইর ফার্মের মোড় এলাকা হতে ডিবি লেখা কালো রংয়ের একটি হায়েস মাইক্রোবাস হতে ২) শ্রী সাগর চন্দ্র মালি (৩০) ৩) শাহ আলম হাওলাদার (৩৫) ৪)মোঃ কামরুল ইসলাম @রমিজ তালুকদার (৩০) ৫) মো: মাকসুদুল মোমিন @শামীম (৪৩) দেরকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত দেয়া তথ্য মতে পাড়া ডগাইরের একটি বাসা হতে ৬) মোঃ হাসান (৩৮) ৭) মো: নুরুল ইসলাম (৩০) কে হেফাজতে নেয় ডিবি পুলিশ। তাদের নিকট হতে দুইটি ডিবি লেখা জ্যাকেট, দুইটি ছোট সিগনাল লাইট, একটি হ্যান্ডকাপ, গাড়িতে লাগানোর জন্য ডিবি লেখা স্টিকার জব্দ করা হয় এবং একই সাথে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে খিলক্ষেত থানাধীন ৩০০ ফিট রোডস্থ অষ্ট্রলিয়ান স্কুল এর সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে আরো ৯ জনসহ সর্বমোট ১৬ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পারস্পরিক যোগসাজসে মাইক্রোবাস যোগে মানি এক্সচেঞ্জ ও ব্যাংক এলাকায় বিশেষত মতিঝিল, পল্টন, ধানমন্ডি ও গুলশান থেকে কোন ব্যক্তি টাকা নিয়ে বের হওয়ার সময় তাদের টার্গেটকে ফলো করে। ২/৩ জন মোটর সাইকেল নিয়ে টার্গেটের পিছু নেয়। পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থানে মাইক্রোবাস নিয়ে তাদের অগ্রগামী টিম প্রস্তুত থাকে। মোটর সাইকেল টিমের তথ্যমতে সুবিধাজনক জায়গায় মাইক্রোবাস এসে টার্গেটকে গতিরোধ করে ভিকটিমকে মাইক্রোবাসে উঠিয়ে নেয় এবং ভিকটিমের কাছ থেকে সর্বস্ব লুঠিয়ে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে যায়। উল্লেখ্য ডাকাত দলের সদস্যদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধীক মামলার তথ্য পাওয়া যায়।
ধৃত আসমীদের বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।
