আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
কয়েক মাস আগেও চীনের অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হবে বলে আশা করা হয়েছিল। শূন্য করোনা নীতি বাতিল করা হয়। সবাইকে প্রকাশ্যে চলাফেরার স্বাধীনতা দেওয়া হয়। কিন্তু সেই প্রত্যাশিত প্রত্যাবর্তন হতাশায় পরিণত হচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা আশা করেছিলেন যে এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে বার্ষিক জিডিপি হার ১০ শতাংশে পৌঁছাবে। কিন্তু সেটা ৩ শতাংশের বেশি অর্জন করা কঠিন।
দেশের অর্থনীতি এখন মুদ্রাস্ফীতির মুখে। অর্থাৎ পণ্য ও সেবার মান উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এ ক্ষেত্রে দেশটির কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া সন্তোষজনক নয়। তাছাড়া তাছাড়া প্রপার্টি সংকট আরও প্রকট হচ্ছে। ফলে চীনের অর্থনীতি দীর্ঘমেয়াদি সংকটের দিকে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
তবে উদ্বেগের বিষয় হলো বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির যেকোনো সমস্যা সমগ্র বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করবে। চীনের অর্থনীতি বিশাল। তাই তাদের অর্থনৈতিক পরিবর্তন বিশ্ব অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। একইভাবে, চীনের অর্থনীতি মন্থর হলে, অন্যান্য দেশের প্রবৃদ্ধিতে নেতিবাচকভাবে পূর্বাভাস দেওয়া হয়। চীনের হাউজহোল্ড কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য ও সেবা ক্রয় কমিয়ে দিলে এর প্রভাব পড়বে উৎপাদক ও ভোক্তাদের ওপর। কিছু ক্ষেত্রে চীনের জন্য যা কঠিন তা অন্যদের জন্য মাথাব্যথা। তবে কিছু কিছু কোম্পানির জন্য এটি আবার স্বস্তিদায়ক।
চীনের অর্থনৈতিক মন্দায় পণ্য রপ্তানিকারকদের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। বিশ্বের জ্বালানি তেলের এক-পঞ্চমাংশ, পরিশোধিত তামা, নিকেল ও দস্তার অর্ধেক এবং লোহার তিন-পঞ্চমাংশেরও বেশি চীনে যায়। চীনের সম্পত্তি সংকট মানে এই পণ্যগুলির চাহিদা কমে যাচ্ছে, যা কিছু দেশের জন্য ধাক্কা। উদাহরণস্বরূপ, জাম্বিয়া তামাসহ বেশ কিছু ধাতু চীনে রপ্তানি করে, যা দেশটির জিডিপির ২০ শতাংশ। একইভাবে চীনে কয়লা ও আয়রণ সরবরাহ করে অস্ট্রেলিয়া। তাই সেখানেও প্রভাব পড়ছে।
জার্মানিসহ পশ্চিমা দেশগুলো অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর অন্যতম কারণ চীনের চাহিদা ঘাটতি। পশ্চিমের অনেক কোম্পানি তাদের আয়ের জন্য চীনের ওপর নির্ভরশীল। ২০২১ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং জাপানের অন্তত ২০০টি বহুজাতিক কোম্পানি তাদের পণ্যের ২০ শতাংশ চীনে বিক্রি করেছে, যা ৭০০ বিলিয়ন ডলার রাজস্ব এনেছে। টেসলা তাদের গাড়ির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ চীনে বিক্রি করে থাকে।
দীর্ঘায়িত মন্দা চীনকে অভ্যন্তরীণ দিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। এছাড়া দেশটি বিনিয়োগ ও ঋণও কমিয়ে দিতে পারে।