নিজস্ব প্রতিনিধি:
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, খেলাপি ঋণ কমাতে যথেষ্ট আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যার কারণে খেলাপি ঋণের মাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে এবং এখন তা ব্যাংকিং খাতের গলার কাটায় পরিণত হয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন যে আইন হয়েছে; সেখানেও তেমন কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। আর সুদের হার নিয়ে নতুন মুদ্রানীতিতে যে পলিসি নেয়া হয়েছে, সেখানেও অস্পষ্টতা রয়েছে। তার মানে বাংলাদেশ ব্যাংক কেস বাই কেস সিদ্ধান্ত নেবে। ফলস্বরূপ, এটি তদবিরের একটি দরজা খুলে দিল। সুতরাং হাত ধরে দুর্নীতি করার সুযোগ দেওয়া হল।
এই অর্থনীতিবিদ বলেন, নতুন আইনে খেলাপি ঋণ কমাতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ খুঁজে পাওয়া কঠিন। ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর সর্বশেষ সংশোধনী ব্যাংকিং খাতের আর্থিক অবস্থাকে আরও দুর্বল করবে।
তিনি বলেন, ২০১৫-১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক খেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পরিশোধের সুযোগ দিয়ে আসছে।
জাহিদ হোসেন বলছেন, অভ্যাসগত খেলাপিদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকার আইনে কোনো কঠোর ব্যবস্থা করেনি। নতুন আইন, কোনো গ্রুপ অব কোম্পানিকে ঋণ নিতে অনুমতি দেবে, এমনকি ওই কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঋণখেলাপি হলেও। অতীতে এ ধরনের সুবিধা ছিল না বলে জানিয়েছেন এই অর্থনীতিবিদ। নতুন আইনে পরিচালকদের মেয়াদ ৯ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর করা হয়েছে। এ বিধানটি ব্যাংকের সুশাসন দুর্বল করবে বলে মনে করেন তিনি।
তিনি বলেন, পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে পরিচালকরা ভিন্ন ব্যাংক থেকে যে ঋণ নেন তা কীভাবে আটকানো যাবে এই আইনে সে বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি। কারণ, কিছু পরিচালক আছেন যারা অন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নেন। ইতোমধ্যে ব্যাংক বোর্ডের অনেক সদস্য একে অপরের মধ্যে পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে এভাবে বিপুল পরিমাণ ঋণ নিয়েছেন, যা ব্যাংকের সুশাসন নিয়ে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
নতুন আইন ইচ্ছাকৃত এবং অনিচ্ছাকৃত ডিফল্ট বলতে কী বোঝায় তার একটি বিস্তৃত সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। ব্যাংকাররা কীভাবে এই সংজ্ঞাগুলি প্রয়োগ করবেন তা ভবিষ্যতে বোঝা যাবে। তবে কী আশা করা হয়েছিল- খেলাপিদের স্বীকৃতির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানদণ্ড থেকে সরে গিয়ে খেলাপিদের স্বীকৃতির মানদণ্ড শিথিল করা হয়েছিল। সুতরাং এখন যে কেউ খেলাপির তালিকায় ঢুকলে তেমন কিছু এসে যাবে না।