কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:
গ্রামটির নাম মঙ্গলবাড়িয়া, যেখানে প্রতি বছর লিচু বিক্রি হয় ১০ কোটি টাকার অধিক। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়ায় অবস্থিত ছোট্ট একটি গ্রাম মঙ্গলবাড়িয়া। আর গ্রামের নামেই লিচুর নাম রাখা হয়েছে ‘মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু’।
রসালো, সুমিষ্ট, সুন্দর গন্ধ ও গাঢ় লাল রঙের কারণে এ লিচুর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ- বিদেশে। এবারও বাম্পার ফলনও হয়েছে, আগামী ৩/৭ দিনের মধ্যেই পুরোদমে চলবে লিচু ভাঙার কাজ।
স্থানীয় বাজারে অনেক জাতের লিচু থাকলেও ক্রেতাদের চোখ টসটসে রসের সুস্বাদু মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর দিকে। এ লিচুর স্বাদ ঘ্রান ও স্বচক্ষে দেখার জন্য প্রতিদিন মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে ভিড় করেন রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ক্রেতারা। বাগানেই বিক্রি হচ্ছে একশ লিচু ৬০০-৮০০ টাকায়।
জানা গেছে, প্রায় দুইশ বছর আগে সুদূর চীন থেকে কোনো এক ব্যক্তি প্রথমে একটি চারা এনে লাগায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া পৌর এলাকা মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে। অধিক ফলন ও রসে টসটসে ছোট বিচির কারণে এ লিচুর প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়ে উঠে এলাকাবাসী। কিছু দিনের মধ্যেই এ জাতের লিচুর কলম চারা ছড়িয়ে পড়ে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে। লাভজনক হওয়ায় দ্রুতই বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠে গ্রামবাসী। বর্তমানে এলাকার প্রতিটি বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার দুপাশে, জমির আইলে ও বাগানে থোকায় থোকায় ঝুলছে এ লিচুর গাছ।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় আট হাজার লিচুর গাছ রয়েছে। এ বছর বাগান থেকে প্রায় আট থেকে ১০ কোটি কাটার লিচু বিক্রি করতে পারবেন চাষিরা।
লিচু চাষি মুর্শিদ উদ্দিন জানান, আমার দাদা, বাবা দীর্ঘদিন ধরে লিচু চাষে যুক্ত ছিলেন। এখন আমি করছি। আমার দুইশতাধিক গাছ রয়েছে। লিচু চাষে আমরা লাভবান। প্রতি বছর লিচু থেকে আট থেকে দশ লাখ টাকা আয় করি। এবার আশা করছি ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা হাতে আসবে।
প্রবীণ লিচু চাষি তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামটি লিচুর গ্রাম হিসেবেই পরিচিত। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই কম বেশি লিচু গাছ রয়েছে। আর এই গ্রামের প্রতিটি লিচুই টসটসে গোলাপি এর ঘ্রান বলে বোঝানো যাবে না, খেতে অনেক সুস্বাদু ও মজা। একটি লিচু মুখে দিলে আপনার মনে হবে ২০ টাকা দামের গোল্লা (মিষ্টি) মুখে দিয়েছেন। লিচুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় আগে এসব জমিতে ধান ও সবজি চাষ করতাম। এখন লিচু চাষ করি। কারণ লিচু চাষে খরচ কম লাভ অনেক বেশি। আমার প্রায় ২৫০টি গাছ রয়েছে। আশা করছি এবার সাড়ে দশ থেকে ১২ লাখ টাকা বিক্রি হবে।
ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে লিচু কিনতে আসা বেশ কয়েকজন বলেন, বন্ধুদের মাধ্যমে মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুর খবর পেয়ে কিনতে এসেছি। বাগানে বসে অনেক লিচু খেয়েছি। প্রতি বছরই লিচু খাই কিন্তু এ লিচুর স্বাদ ও ঘ্রাণ একেবারেই আলাদা। পরিবার, স্বজনদের জন্যও লিচু কিনেছি।
পাকুন্দিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নূর-ই-আলম জানান, পাকুন্দিয়ার স্বনামধন্য মঙ্গলবাড়িয়ার লিচু। দেশ বিদেশে খ্যাতি রয়েছে মঙ্গলবাড়িয়া লিচুর। এটাকে ব্র্যান্ডিংয়ের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে চিঠি দিয়েছি। আশা করছি মঙ্গলবাড়িয়ার লিচুকে ব্র্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে সারাদেশের পরিচিত করাতে পারবো। এ লিচুর স্বাদ ও ঘ্রাণ আলাদা। লিচু মৌসুমী এ গ্রামে ফলপ্রেমীদের মেলা বসে। ভোক্তাদের কথা মাথায় রেখে নিরাপদ লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। মঙ্গলবাড়িয়া গ্রামে প্রায় আট হাজার লিচু গাছ রয়েছে। এবারের মৌসুমে এসব লিচু প্রায় ১০ কোটি টাকা বিক্রি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।