কালীগঞ্জের বাজার রোড এখন ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও ইজিবাইকের দখলে

কালীগঞ্জের বাজার রোড এখন ফুটপাতের ব্যবসায়ী ও ইজিবাইকের দখলে

জেলা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মেইন বাসষ্ট্যান্ড থেকে পুরাতন ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তাটি অত্যন্ত ব্যস্ততম এবং একমাত্র সড়ক যা এখন ফুটপাতের ব্যবসায়ী, রিক্সা, ভ্যান ও ইজিবাইক চালকদের দখলে। এখানে রঙ্গিন ছাতা স্থাপন করে ব্যবসা বসিয়েছে প্রায় ১২০ ভ্রাম্যমান দোকান। প্রতিনিয়ত ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারন মানুষ ও মার্কেটের দোকানদার ব্যবসায়ীদের। রাস্তার দু’পাশের ফুটপাতজুড়ে হকারদের জুতা ৫ টি দোকান, নিক্সোনের কাপড়ের ১৫ টি, দোকান থেকে শুরু করে টং ৫টি দোকানে চা, ডাব ৪ টি, ফাস্ট ফুডসহ নানা ধরনের ব্যবসা চলছে। রাস্তার উপরে চা, পান বিড়ির দোকান রয়েছে ১০ টি, হাটবারে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ফার্নিচার ব্যবসায়ীদের ফুটপাতে ফার্নিচার প্রদর্শনী এবং বিক্রয়ের ৬ টি দোকান। এতে গোটা ফুটপাত সহ রাস্তা চলে গেছে রাস্তার পাশের দোকান ও কিছু ভাসমান হকারদের দখলে। ফলে বাজার রোডের এই প্রধান সড়ক টি সংকুচিত হয়ে পড়েছে এবং চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন পথচারীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের মেইন বাসষ্ট্যান্ড থেকে পুরাতন বাজারে যেতে ফুটপাতে চলছে নানা ধরনের ব্যবসা। এছাড়া শহরের প্রত্যেকটা ফুটপাতে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ হকারদের জুতার দোকানসহ ভ্যান, রিক্সা ও ইজিবাইকের যন্ত্রতন্ত্র পার্কিং। হকার দোকানিরা বলছে আমাদের থেকে দিন প্রতি ২০ টাকা করে নেওয়া হয়। হাটের দিনে দেওয়া হয় আরো অতিরিক্ত। তবে এই টাকা কারা নেয় তাদের নাম জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন তারা।

পথচারীদের অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, মূলরাস্তা এবং ফুটপাত মানুষের হাঁটার জন্য, দোকানপাট বসানোর জন্য নয়। কিন্তু এই মুলরাস্তাতো হকারদের দখলে। ফুটপাত দিয়ে মানুষের হাঁটার কোনো পরিবেশ নেই। রাস্তার সাথে ফুটপাতজুড়ে বসেছে হরেক রকমের হকারদের শতাধিক দোকান, তার ওপর আবার ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহনের পার্কিং। এসব কারণে সাধারণ পথচারীদেও পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। জনসাধারণের চলাচলের জন্য রাস্তার দু’ধারে রয়েছে ফুটপাত। ফুটপাত দিয়ে হাটা পথচারীদের নাগরিক অধিকার কিন্তু ফুটপাতে হাঁটাও কেড়ে নিয়েছে অবৈধ দখলদারেরা। এসব রোধ করার জন্য এগিয়ে আসছে না কেউ।

পথচারী ফারুক আহমেদ বলেন, ফুটপাত এখন দখলদারদের হাতে। রাস্তার দুই পাশে যেসব ফুটপাত আছে, তা বর্তমানে হকারদের দখলে, তাদের দোকানে সারা দিন ভিড় লেগেই থাকে। ফলে পথচারীদের হাঁটার কোনো সুযোগ নেই। আর এসব ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় বেশির ভাগ পথচারীই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যায়, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এর ফলে যানজটেরও সৃষ্টি হয়।

ফুটপাতের ফার্নিচার দোকানের এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মালিক যেভাবে নির্দেশ দেয় সেভাবেই আমাদের ব্যবসা করতে হয়। এভাবে রাস্তার উপর ফার্নিচার রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা কোথায় যাবো, ব্যবসা করতে হলে এখানে ছাড়া আমাদের অন্য কোন জায়গা নেই।
সরোজমিনে দেখা গেছে, শহরের এই রাস্তাটি খুুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি রাস্তা। এখানে আছে মুনছুর প্লাজা শপিংমল, নেছা শপিং মল, ১০ তলা ওসমান রাশিদা মার্কেট, রহামানিয়া সুপার মার্কেট, ফাতেমা প্রাইভেট হাসপাতাল, কুইন্স হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি নামকরা ব্যাংক ও বীম অফিস। ফলে ফুটপাত দখল হয়ে যাওয়ায় পথচারীর সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরাও কারন এই পথ দিয়েই যেতে হয় কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।। এদিকে ফুটপাত দখলের কারনে যানজট লেগে আছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তাই ঝুঁকি নিয়েই রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, রাস্তায় ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের হাঁকডাকের কারণে নানাভাবে আমাদের ক্রেতারা বিব্রত বোধ করেন। আমরা যারা লক্ষ লক্ষ টাকা অগ্রিম এবং হাজার হাজার টাকা দোকান ভাড়া নিয়ে যে ব্যবসা করি, ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের কারনে বাইরে থেকে আনা পন্যগুলোর গাড়ি আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে লাগাতে পারি না। নিষেধ করলে তারা আমাদের সাথে মারমুখী আচারন করে। তাদের সাথে আমাদের প্রতিনিয়ত বিবাদ লেগেই থাকে। এভাবে ব্যবসা করা দুরুহ ব্যাপার। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে চার্জার ভ্যানের উপর বড় বড় ছাতা টাঙিয়ে ভ্রাম্যমান শরবতের দোকান, দোকার, চা, পান বিড়ির দোকানসহ বিভিন্ন দোকান বসে যার কারনে আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেখা যায় না। এজন্য আমাদের ব্যবসায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এবং আমরা ব্যবসায় অর্থিক দিক দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হতে হচ্ছি। যেখানে ফুটপাত দেওয়া হয়েছে মানুষের হয়রানি লাঘবের জন্য, সেখানে ফুটপাতেই মানুষকে বেশি হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে।

আর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এসব কর্মকান্ড দেখেও না দেখার ভান করে। ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের জন্য যদি আলাদা হকারস মার্কেট থাকে তাহলে আমাদের এই ধরনের সমস্যায় পড়তে হতো না। আমরা পৌর কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসনের নিকট জোর দাবি জানাচ্ছি যে ফুটপাতের ব্যবসায়ীদের আলাদা ব্যবস্থা করা হোক।

এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ কালীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র আশরাফুল আলম আশরাফ বলেন, ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা অধিকাংশ সবাই গরীব মানুষ। তারা দীর্ঘদিন ধরে ফুটপাতে ব্যবসা করে আসছেন। এতে ব্যবসায়ী এবং পথচারীদের সমস্য হচ্ছে এটা আমি জানি। আর এ সমস্যা দীর্ঘদিনের। আমি চেষ্টা করছি চলমান এই সমস্যার সমাধান করতে। ফুটপাতেরে ব্যবসায়ীদের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে একটি হকার্স মার্কেট করার পরিকল্পনা আছে। সেখানে তাদের স্থানান্তর করা হবে। আশা করি এই সমস্য খুব শীঘ্রই সমাধান হবে। ইজিবাইক, ভ্যান রিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহন রেখে যানজট সৃষ্টি না করার জন্য আমি সেখানে নিজে গিয়ে কয়েকবার তাদেরকে সরিয়ে দিয়েছি কিন্তু দুয়েকদিন পরিস্কার থাকলেও পুনরায় যানজটের সৃষ্টি করে। ব্যবসায়ী এবং পথচারীদের চলাচলের অসুবিধা যাতে না হয় তার জন্য রাস্তার মাঝখান দিয়ে একটি ডিভাইডার নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ শেষ হলেই ওখান থেকে সকল প্রকার রিক্সা, ভ্যান এবং ইজিবাইক সরিয়ে দেওয়া হবে। মেয়র আরো বলেন, ফুটপাতের দোকাদারদের নিকট থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। যদি এভাবে কেউ টাকা নেয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে যোগ করেন তিনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *