আমনের ভর মৌসুমেও নওগাঁয় কমেনি চালের দাম

আমনের ভর মৌসুমেও নওগাঁয় কমেনি চালের দাম

জেলা

রাশেদুজ্জামান,নওগাঁ প্রতিনিধিঃ
উত্তরের শষ্য ভান্ডার খ্যাত জেলা নওগাঁয় আমনের ভর মৌসুমে ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও চালের বাজারে স্বস্তির দেখা মেলেনি। গত ১ মাস যাবত চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় সহসাই চালের বাজার কমার সম্ভাবনা নেই বলছেন ব্যবসায়ীরা। এতে চরম বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত মনিটরিংয়ের দাবী ভোক্তাদের।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত আমন মৌসুমে নওগাঁয় ১ লক্ষ ৯৬ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ করা হয়েছিল। যেখান থেকে ৯ লক্ষ ৩২ হাজার ২১৫ মেট্রিক টন ধান উৎপাদিত হয়। চালের হিসাব অনুযায়ী যার পরিমাণ ৬ লক্ষ ২১ হাজার ৪৭৭ মেট্রিক টন।
সরেজমিনে জানা যায়, নওগাঁর মোকাম ও মিলগেট গুলোতে বর্তমানে পাইকারী পর্যায়ে মানভেদে প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ জাতের চাল ৪৫-৪৭ টাকা, মিনিকেট ৬৪-৬৭ টাকা এবং কাটারীভোগ ৬৫-৭০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে মানভেদে এসব চাল প্রতি কেজি স্বর্ণা-৫ ৪৮-৫২ টাকা, মিনিকেট ৬০-৬৫ টাকা এবং কাটারীভোগ ৬৮-৭২ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও খুচরা বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি ব্রি আর-২৮ ও ২৯ জাতের চাল ৫৫-৫৬ টাকা, রনজিত ৪৮-৫০ টাকা এবং সুগন্ধি চিনিগুড়া চাল ১২০-১৪০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা পর্যায়ে চিনিগুড়া চালের দাম গত মাসের তুলনায় প্রতি কেজিতে বেড়েছে ১৫-২০ টাকা। গতকাল সকালে শহরের পৌর চাল বাজারে আসা ক্রেতা রিক্সা চালক সাজেদুর বলেন, ২৪০ টাকায় ৫ কেজি স্বর্ণা-৫ চাল কিনলাম। ভেবেছিলাম আমনের নতুন ধানের চাল বাজারে আসলে দাম সহনীয় থাকবে। কিন্তু দাম তো কমলোই না, উল্টো আরো বাড়ছে। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে উপার্জিত টাকা দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে চাল, ডাল ও তেল কিনতেই খরচ হয়ে যায়। জীবনে সঞ্চয় বলতে কিছুই নেই। উল্টো বিভিন্ন এনজিও ও সমবায় সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে সংসার চালাতে হয়। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ না হলে আগামীতে না খেয়ে মরতে হবে। শহরের আরজি নওগাঁ মহল্লা থেকে আসা ক্রেতা রাজু বলেন, গত কয়েক বছর যাবত একবার যেই চালের দাম বাড়ছে, সহজে সেটার দাম আর কমছে না। নতুন ধান বাজারে আসলেও কোন মৌসুমেই দৃশ্যমান চালের দামে পরিবর্তন হয় না। যা কোনক্রমেই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের নিয়মিত বাজার মনিটরিং প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
পৌর চাল বাজারের ব্যবসায়ী উত্তম সরকার বলেন, নতুন বছরের শুরুতে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের মজুদের কারণে চিনিগুড়া চালের দাম এক লাফে প্রতি কেজিতে ১৫-২০ টাকা বেড়েছে। তবে বাকী সব চালের বাজার স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। কৃষকের ঘরে ঘরে নতুন ধানের চাল থাকায় বাজার এখন প্রায় ক্রেতাশূণ্য। এছাড়াও অনেকে চালের দাম কমার আশায় বাজারে আসছেন না। তাই বেচাকেনায় মন্দা চলছে।
নওগাঁ জেলা চালকল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ধানের বর্তমান বাজারদর অনুযায়ী পাইকারী পর্যায়ে প্রতি কেজি চালের দাম ৪৬-৫০ টাকার মধ্যে রয়েছে। সেই দিক বিবেচনায় চালের বাজার এ বছর শতভাগ স্থিতিশীল রয়েছে। আমনের ভর মৌসুমের ৩ মাস পেরিয়ে গেলেও বাজারে ধানের দামে খুব একটা পরিবর্তন আসেনি। এরই মধ্যে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে আমাদের চাল উৎপাদনে খরচ বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। তাই আগামীতে চালের দাম কমার পরিবর্তে আরো বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *