অঘোষিত বন্ধে স্থবির হয়ে পড়েছে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থল বন্দর

অঘোষিত বন্ধে স্থবির হয়ে পড়েছে শেরপুরের নাকুগাঁও স্থল বন্দর

জেলা

মারুফুর রহমান, শেরপুর প্রতিনিধি:
অঘোষিত বন্ধে স্থবির হয়ে পড়েছে নাকুগাঁও স্থল বন্দরের আমদানি রপ্তানি। ব্যবসায়ীরা বলছেন প্রায় দেড় মাস যাবত আমদানি রপ্তানি বন্ধের কারণে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ৪ হাজার শ্রমিক এবং ডলার সংকট ও ভারতীয় পাথর না আসায় ব্যবসায়ীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন সরকারীভাবে পাথর আমদানি বন্ধের ঘোষণা না থাকলেও ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথরের কোন গাড়ি বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে না।

জানা যায়, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও স্থল বন্দর দিয়ে গত দু’মাস আগেও ভারত থেকে আসা ট্রাক লোড-আনলোড, পাথর ভাঙা মেশিন এবং হেমার ও হাতুরি দিয়ে পাথর ভাঙার শব্দে মুখোরিত ছিলো জেলার একমাত্র এই বন্দরটি। এতে এ পেশার সাথে জড়িত প্রায় ৪ হাজার নারী ও পুরুষ শ্রমিকের মনে ছিলো প্রানচাঞ্চল্য। কিন্তু গত ৯ জুলাই থেকে ভারতের ব্যবসায়ীরা পাথর রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

ভারতের পাথর রপ্তানিকারক সমিতি বন্ধের কারণ হিসেবে জানায় সড়ক মেরামতের কারণে সাময়িকভাবে পাথর রপ্তানি বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি মৌখিক ভাবে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অবগত করা হলে ব্যবসায়ীরা তা মেনে নেয়। কিন্তু দীর্ঘ চল্লিশ দিন যাবত ভারত থেকে কোন পাথর বোঝাই ট্রাক না আসায় হতাশ হয়ে পড়েছে বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা। এমনকি ডিপোতে জমানো পাথরও শেষ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা। কর্মহীন হয়ে পড়েছে তারা। তবে গত চল্লিশ দিনে সাত থেকে আটটি গাড়ি ভুটানের পাথর নিয়ে আসলেও তা খুবই অপ্রতুল।

ব্যবসায়ীরা জানায়, এলসি করা বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের প্রায় শত কোটি টাকার পাথর আটকে আছে ভারতের ওপারে। সবুজ এন্টারপ্রাইজের মালিক রুস্তম আলী ও আশিক এন্টারপ্রাইজের মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কয়েক দিনের মধ্যেই পাথর আসা শুরু হয়ে যাবে এমন আশ্বাস দিয়ে আসছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা। আমরাও ওই আশ্বাসের উপর ভর করে চল্লিশ দিন পাড় করেছি কিন্তু কিছুই হচ্ছে না।

তাই সরকারের কাছে দাবি ভারতের সরকারের সাথে কথা বলে পাথর ও অন্যান্য পণ্য আমদানি করার ব্যবস্থা করার ব্যাপারে। এই সমস্যার সমাধান হলে বন্দরের প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে আসবে এবং ব্যবসায়ীরাও স্বস্তির নিশ্বাস ফেলবে।

এদিকে শ্রমিকরা দাবি জানায়, এ বন্দর দিয়ে ২৭ টি পণ্য আমদানীর অনুমোদন থাকলেও আমদানি হচ্ছে শুধু মাত্র ভারত ও ভুটানের পাথর এবং কয়লা।
নাকুগাঁও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আলম ও সাধারন সম্পাদক সুজন মিয়া বলেন, বছরখানিক আগে থেকেই কয়লা আমদানি বন্ধ হলে শুধু মাত্র ভুটান ও ভারতের পাথরের উপর নির্ভর করে টিকে আছে নাকুগাঁও বন্দরের ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় মানবেতর জীবন যাপন করছে বন্দরের প্রায় চার হাজার শ্রমিক। তাই তারা আরো পন্য আমদানির উপর জোড় দিয়ে বলেন, পাথর আমদানি ছাড়াও অন্যান্য পণ্য আমদানি করার সুযোগ করে দিলে শ্রমিকরা একেবারে বেকার হতো না। অসহায় শ্রমিকদের কর্মসংস্থানের জন্য ব্যবসায়ী এবং সরকারের উচিত দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া।

নাকুগাঁও আমদানি-রপ্তানিকারক সমিতি যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান জুয়েল বলেন, পাথর আমদানি বন্ধ থাকায় আমাদের কোটি কোটি টাকা আটকা পড়ে আছে। এতে লসের মুখ দেখতে হচ্ছে আমাদের। তবে এ সপ্তাদের মধ্যে পাথর আসা শুরু হবে বলে আশ্বাস দিয়েছে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা।

ব্যবসায়ীদের লোকসান এবং শ্রমিকরা কর্মহীন হওয়ার পাশাপাশি সরকারও প্রায় দের কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়েছে বলে বন্দরের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ জানায়।
নাকুগাঁও সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো.মোজাম্মেল হক বলেন, গত জুন মাসে এ বন্দরে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮৫ লক্ষ ৮৮ হাজার। আর জুলাই ও চলতি আগষ্ট মাস পর্যন্ত দুই মাসে ভুটানের কিছু পাথর আসায় রাজস্ব আদায় হয়েছে নামমাত্র। আমদানি চালু থাকলে দুই মাসে রাজস্ব আদায় হতো প্রায় দেড় কোটি টাকা।

সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এবং ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকের মাধ্যমে এর দ্রুত সমাধান করে সাধারণ ব্যবসায়ীরা লোকসান ঠেকানোসহ শ্রমিকদের কর্ম ফিরিয়ে দিতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশা করছেন সাধারণ ব্যবসায়ী ও শ্রমিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *